পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প: শেখ হাসিনা-রেহানাসহ পরিবারের বিরুদ্ধে তিন মামলায় ১৫ জনের সাক্ষ্য

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে ১৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ মো. রবিউল আলম এই সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।

সাক্ষীদের জবানবন্দি

সাক্ষ্যদাতারা হলেন— গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী দেলোয়ার হোসেন ও শফিকুল ইসলাম, এনবিআরের কর অঞ্চল-৬ এর প্রধান সহকারী মোহাম্মদ লুৎফর রহমান, সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর রেজাউল হক এবং নোটিস সার্ভার আবু তাহের।

এই পাঁচ ব্যক্তিই বারবার ঘুরেফিরে সাক্ষ্য দেওয়ায় মোট ১৫ জনের সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদকের কৌঁসুলি মীর আহমেদ আলী সালাম।

মামলার সব আসামি পলাতক থাকায় তাদের আইনজীবীরা সাক্ষীদের জেরা করার সুযোগ পাননি। আদালত আগামী ২১ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ঠিক করেছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবীদের আবেদন

শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়তে এদিন আবেদন করেন আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন, ইমরান হোসেন, শেখ ফরিদ ও মো. তপু। তবে শেখ হাসিনা পলাতক থাকায় আদালত তাদের সেই অনুমতি দেয়নি।

মামলার অগ্রগতি

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ৬ প্লট দুর্নীতির মামলায় গত ৩১ জুলাই শেখ হাসিনা, শেখ রেহানাসহ তাদের সন্তানদের বিরুদ্ধে মোট ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার দুই বিশেষ জজ আদালত।

এই মামলাগুলোর মধ্যে তিনটিতে শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে গত ১১, ২৬ অগাস্ট ও ২ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। বাকি তিন মামলায় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে গত ১৩ অগাস্ট প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়, যেখানে বাদীরা সাক্ষ্য দেন। এরপর ২৮ অগাস্ট তিন মামলায় আরও ৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।

আসামিদের তালিকা

শেখ পরিবারের বাইরে যে ১৬ জন আসামির নাম রয়েছে, তারা হলেন— জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এবং প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।

২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন। তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও দেশের বাইরে রয়েছেন।

তাদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা করে ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে গত ডিসেম্বরে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরপর ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে দুদক। পরদিন শেখ রেহানা, তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

এরপর ১৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক। সব মিলিয়ে ছয় মামলায় শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিদের মধ্যে কেউ কেউ একাধিক মামলার আসামি। সব মামলায় আসামির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ জন।

দুদকের অভিযোগ, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে শেখ হাসিনা ও তার পরিবার ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরে অযোগ্য হয়েও ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ নেন।