চার মাস চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া

চার মাস লন্ডনে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে তাকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে তাকে স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা—খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান।

খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে নেতাকর্মীরা বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ পর্যন্ত স্লোগানে স্লোগানে তাকে বরণ করেন। ‘খালেদা জিয়ার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘খালেদা, জিয়া’, ‘তারেক, রহমান’, ‘খালেদা জিয়া ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’—এমন নানা স্লোগানে মুখরিত ছিল সড়ক।

গত জানুয়ারিতে যেভাবে লন্ডনে গিয়েছিলেন, সেভাবেই কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দেশে ফেরেন খালেদা জিয়া। তার সঙ্গে ছিলেন দুই পুত্রবধূ—তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান এবং আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান সিঁথি।

এছাড়া তার সঙ্গে দেশে ফেরেন চিকিৎসক দলের প্রধান শাহাবুদ্দিন তালুকদার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন, উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, লন্ডন বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদসহ ১৪ জন।

ভোর থেকেই বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিমানবন্দর সড়কে জড়ো হতে থাকেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বনানী, খিলক্ষেত ও বিমানবন্দর এলাকায় তারা অবস্থান নেন। অনেকেই পিকআপ বা বাসে গান বাজিয়ে, দলীয় ও জাতীয় পতাকা নিয়ে আসেন। কেউ মাথায় দলের পতাকা লাগিয়ে অংশ নেন কর্মসূচিতে।

নেতাকর্মীদের জড়ো হওয়া ঘিরে বিমানবন্দর এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব, সেনা সদস্য, এপিবিএন ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়।

সকাল সোয়া ৯টায় বিমানবন্দরের সামনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়ার ফেরা গণতন্ত্রের পথে নতুন আশার সঞ্চার করবে। তিনি বলেন, “আজ দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।”

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরা ঘিরে যানজটের আশঙ্কায় বিদেশগামী যাত্রীদের বাড়তি সময় নিয়ে রওনা হওয়ার আহ্বান জানায় বিভিন্ন এয়ারলাইন্স। গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের বাসভবন ‘ফিরোজা’কে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানায় বিএনপি।

খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানানোর জন্য দলীয়ভাবে নির্দিষ্ট পথনকশা অনুযায়ী নেতা-কর্মীদের অবস্থান করতে বলা হয়। যানজট এড়াতে ঢাকা মহানগর পুলিশ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গুলশান/বনানী থেকে উত্তরা পর্যন্ত সড়ক পরিহার করতে জনসাধারণকে অনুরোধ করে। নেতা-কর্মীদের ফুটপাতে অবস্থান এবং স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েনের নির্দেশও দেওয়া হয়। অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে খোলা রাখা হয়; সেনানিবাসের রাস্তায় হালকা যান চলাচলও সচল ছিল।

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসসহ নানা জটিল রোগে ভুগছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৭ জানুয়ারি তিনি কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনে যান। সেখানকার লন্ডন ক্লিনিকে অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ক্লিনিকে ১৭ দিন থাকার পর তিনি তারেক রহমানের বাসায় অবস্থান করেন।

সোমবার দুপুরে হিথ্রো বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন খালেদা জিয়া। গাড়ি চালিয়ে তাকে বিমানবন্দরে নিয়ে যান বড় ছেলে তারেক রহমান, সঙ্গে ছিলেন তারেকের মেয়ে জায়মা রহমান। প্রবাসী নেতাকর্মীরা টার্মিনালে ভিড় করেন। সেখানে আবেগঘন পরিবেশে খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে ধরেন তারেক ও জায়মা। বিমান ছাড়ার আগে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ভাইয়াকে দেখে রেখো।”

সোমবার বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে কাতারের আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি হিথ্রো বিমানবন্দর ত্যাগ করে। ১৭ বছর পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফেরেন তার পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান, যদিও তারেক রহমানের দেশে ফেরার সময় এখনো অনিশ্চিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *