রাবিতে রাকসু নির্বাচনে আবারও সরব প্রচার, উচ্ছ্বাসে শিক্ষার্থীরা

দীর্ঘ অনিশ্চয়তা, দাবি-দাওয়া ও তারিখ পরিবর্তনের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রচার আবার শুরু হয়েছে।

২২ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণের তারিখ পিছিয়ে ১৬ অক্টোবর নির্ধারণ করে। এর মধ্যে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি ও শারদীয় দুর্গোৎসবের ছুটি মিলিয়ে কিছুদিন নীরব ছিল ক্যাম্পাস।

ছুটি শেষে রোববার থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরতে শুরু করেছেন। সোমবার দ্বিতীয় দিনে ক্যাম্পাসজুড়ে নির্বাচনি উচ্ছ্বাস, সরব প্রচার ও ব্যস্ত প্রার্থীদের দেখা গেছে। টুকিটাকি চত্বর, পরিবহন মার্কেট, একাডেমিক ভবনের আশপাশে বিভিন্ন প্যানেলের উপস্থিতি বেড়েছে। প্রার্থীরা প্রচারপত্র বিলি করছেন, শিক্ষার্থীদের হাতে দিচ্ছেন ব্যালট নম্বর, পরিচিতি ও নির্বাচনি অঙ্গীকার। ক্লাসের বিরতি ও আড্ডার ফাঁকে শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে কথা বলছেন, জানাচ্ছেন নিজের প্রত্যাশা।

ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন আবীর বলেন, “‘পোষ্য কোটা’ ইস্যুতে শিক্ষার্থীরা রাকসুর আমেজ থেকে দূরে গিয়েছিল। আমরা তাদের কাছে যাচ্ছি, ভয়ভীতিমুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে কাজ করছি।”

একই প্যানেলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কাফী নবাব সিরাজউদ্দৌলা সেজে প্রচারে নেমেছেন। তিনি বলেন, “সংস্কৃতি সমাজের দর্পন। নবাব সিরাজউদ্দৌলা যেমন লড়েছিলেন, আমিও সংস্কৃতির মর্যাদা রক্ষায় লড়ব—আমাকে পরাজিত হতে দিয়েন না।”

ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী ফাহিম রেজা বলেন, “এত প্রতীক্ষার পর রাকসু নির্বাচন সবার দাবি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ এখনও আছে।” তিনি আরও বলেন, “যারা রাকসু বানচালের চেষ্টা করবে, তাদের ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।”

ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির ছাড়াও আরও নয়টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে—‘রাকসু ফর র‌্যাডিক্যাল চেঞ্জ’, ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’, ‘সচেতন শিক্ষার্থী পরিষদ’, ‘অপরাজেয় ৭১, অপ্রতিরোধ্য ২৪’, ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’, ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’, ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’, ‘ইউনাইটেড ফর রাইটস’ এবং ‘ইন্ডিপেনডেন্ট স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স’।

স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও প্রচারে সক্রিয়। ভিপি পদপ্রার্থী বিল্লাল হোসেন বলেন, “অনেক শিক্ষার্থী এখনও ক্যাম্পাসে ফেরেনি, তবু আমরা তাদের কাছে যাচ্ছি। আশা করি, সময়মতো নির্বাচন হবে।”

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এফ নজরুল ইসলাম বলেন, “সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রচারের জন্য প্রার্থীরা আরও কিছুদিন সময় পাচ্ছেন। আচরণবিধি কেউ ভাঙলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

প্রায় সাড়ে তিন দশক পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাকসু নির্বাচন। ২৮ জুলাই তফসিল ঘোষণা করে কমিশন। সংশোধিত সময়সূচি অনুযায়ী ১৪ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত প্রচার চলবে, আর ১৬ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নয়টি ভবনের ১৭টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। ফলাফল ঘোষণা করা হবে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে।