বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণে কমিশন গঠন করবে: তারেক রহমান

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণের বিষয়টি বিবেচনায় এনে ‘উচ্চ পর্যায়ের কমিশন’ এবং শিক্ষা কারিকুলাম পুনর্গঠনের জন্য ‘শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ‘শিক্ষক মহাসমাবেশে’ ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, “আমরা যদি আমাদের শিক্ষা, আমাদের জাতিকে গঠন করে তুলতে চাই, তাহলে আমাদের যে পরিকল্পনাগুলো রাজনৈতিক দল হিসেবে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করেছি, সেগুলোকে সফল করার জন্য আপনাদের সকলের সহযোগিতা আমি কামনা করছি।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “এই সমাবেশে আপনাদের অনেকের বক্তব্যে শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ প্রসঙ্গ এসেছে, কেউ কেউ মনে হয় আরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার কথা বলেছেন। এছাড়া আপনাদের এই সংগঠনের বাইরেও বেসরকারি শিক্ষকদের বিভিন্ন বেশ কিছু দাবি রয়েছে।

“জনগণের ভোটে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে অবশ্যই রাষ্ট্রের সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়ানো কিংবা চাকরি স্থায়ীকরণ কিংবা জাতীয়করণের বিষয়টি ইতিবাচক বিবেচনার জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিশন আমরা গঠন করব ইনশাআল্লাহ।”

তিনি আরও বলেন, “একই সঙ্গে প্রচলিত শিক্ষা কারিকুলামকে ব্যবহারিক ও কারিগরি শিক্ষাপ্রধান করে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষা সংস্কার কমিশনও আমরা গঠন করতে চাই।”

তারেক রহমান বলেন, “নৈতিকতা এবং ধর্মীয় সামাজিক মূল্যবোধের আলোকে কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা যদি না যায়, তাহলে এই কম্পিটিশনের বিশ্বে আমাদের জাতি হিসেবে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন হবে।”

শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “রাষ্ট্র রাজনীতি এবং সরকারের উন্নয়নে বিএনপির গৃহীত সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন এবং প্রয়োজন দেশের সবচেয়ে সচেতন অংশ শিক্ষকদের সমর্থন।
“একটি জ্ঞান এবং মেধাভিত্তিক রাষ্ট্র ও সরকার গঠনে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি আপনাদের সমর্থন এবং সহযোগিতা চায়। বিএনপি সম্মানিত শিক্ষক-কর্মচারী ভাইবোনদের আন্তরিক সহযোগিতা চায়।”

বিএনপি সমর্থিত শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের উদ্যোগে আয়োজিত এই শিক্ষক মহাসমাবেশ থেকে ‘বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা’, অবসর বয়স ৬৫ বছর নির্ধারণ, ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ ও শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণের দাবি জানানো হয়। সারা দেশ থেকে আসা কয়েক হাজার শিক্ষক ও কর্মচারী সমাবেশে অংশ নেন।

শিক্ষকদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিএনপির পরিকল্পনা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, “সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ কী কী গ্রহণ করা যায়, সেগুলোর ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। দেশের শিক্ষক সমাজের বিশেষ করে স্কুল-মাদ্রাসার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এবং সামাজিক সম্মান সমুন্নত করে শিক্ষকতা পেশাকে সুযোগ ও সম্মানের দিক থেকে প্রতিযোগিতামূলক করে গড়ে তোলার প্রয়োজন আছে অবশ্যই।

“আমি আগেও বলেছি, শিক্ষকতার পেশা কখনোই উপায়হীন বিকল্প কিংবা একটি সাধারণ চাকরির মতো হতে পারে না। বরং শিক্ষা-দীক্ষায় সবচেয়ে মেধাবী মানুষটি যাতে কর্মজীবনে প্রথম অগ্রাধিকার হিসাবে শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নিতে পারেন, সেজন্য বিএনপি শিক্ষা ব্যবস্থাকে সেভাবেই ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করছে।”

তিনি বলেন, “রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক সংস্কার কিংবা নাগরিক উন্নয়নে আমরা যত উদ্যোগ গ্রহণ করি না কেন, শিক্ষা ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণ এবং শিক্ষকদের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা ও সম্মান যদি আমরা নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে অবশ্যই আমরা যে লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছি, সেটিতে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে না।

“আমরা সবাই মিলে যদি শিক্ষক-শিক্ষার্থী একসঙ্গে কাজ করি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগত মান নিশ্চিত করতে পারি, স্কুল-কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার ভিত্তি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে পারি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষা ও গবেষণার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত করতে পারি, তাহলেই আমরা এগিয়ে যেতে পারব।”

রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়েও তিনি মত দেন। তারেক রহমান বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা কিংবা বিজয় দিবসসহ প্রতিবছর বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় ভবনে আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকেন।

“আমি মনে করি, এই জাতীয় দিবসগুলোতে আমন্ত্রিত তালিকায় অবশ্যই প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুলের কমপক্ষে একজন করে শিক্ষককে আমন্ত্রণ জানানো জরুরি। এটি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনে ‘ওয়ারেন্ট অফ প্রেসিডেন্স’ বা রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদা পুনর্মূল্যায়ন করে রাষ্ট্র ও সমাজে শিক্ষা এবং শিক্ষকের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে। কারণ শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তাদের রোল মডেল শিক্ষকদের সম্মানজনক অবস্থানে দেখতে পেলে সেটি তাদের মনোজগতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত মহাসচিব জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আনম এহছানুল হক মিলন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এএসএম আমানুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য আফম ইউসুফ হায়দার, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুগিসউদ্দিন চৌধুরী বক্তব্য দেন।

সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম ও আফরোজা খান রীতাও উপস্থিত ছিলেন।