কাবুলে দূতাবাস পুনরায় চালু করছে ভারত, তালেবান প্রশাসনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার

আফগানিস্তানের তালেবান প্রশাসনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করার ঘোষণা দিয়েছে ভারত। দেশটি আফগান রাজধানী কাবুলে বন্ধ থাকা দূতাবাস পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শুক্রবার আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে বৈঠকের পর এ ঘোষণা দেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর।

২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় এলে ভারত তার দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। এখন পর্যন্ত তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দুই দেশের সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। এর মধ্যেই কাবুলে পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস চালুর ঘোষণা কূটনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তালেবান সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর গত চার বছর ধরে ভারত কাবুলে দূতাবাসের পরিবর্তে একটি ‘টেকনিক্যাল মিশন’ পরিচালনা করে আসছিল এবং ছোট শহরগুলোর কনস্যুলেট বন্ধ করে দিয়েছিল।

জয়শঙ্কর জানান, সেই টেকনিক্যাল মিশনকেই পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় দূতাবাসে উন্নীত করা হবে। তিনি বলেন, “অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমরা কাবুলে ভারতের টেকনিক্যাল মিশনকে ভারতীয় দূতাবাসের মর্যাদায় উন্নীত করছি… ভারত আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, সীমান্তগত অখণ্ডতা ও স্বাধীনতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

বৈঠক শেষে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি বলেন, “আশা করছি, দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়বে। যোগাযোগ ও বিনিময় বৃদ্ধি পাবে।” তিনি ভারতকে ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ হিসেবেও আখ্যা দেন।

বর্তমানে কাবুলে চীন, রাশিয়া, ইরান, পাকিস্তান ও তুরস্কসহ প্রায় ডজনখানেক দেশের দূতাবাস কার্যক্রম চালাচ্ছে। এর মধ্যে রাশিয়া তালেবান প্রশাসনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

রাশিয়া সফর শেষ করে মুত্তাকি ছয় দিনের সফরে ভারতে গেছেন। তার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় জাতিসংঘ সাময়িক ছাড় দিয়েছে। ২০২১ সালের পর এটি কোনও তালেবান মন্ত্রীর প্রথম ভারত সফর।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ভারত এই পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতের অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নীতি বিশেষজ্ঞ হার্শ পান্ত বলেন, “তালেবানকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করা নয়; সংখ্যালঘু, নারী অধিকার ও মানবাধিকার ইস্যুতে ভারত এখনও অসন্তুষ্ট। তবে বাস্তবতার কারণে ভারত এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।”

মুত্তাকি বলেন, আফগানিস্তান অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহার হতে দেবে না। জয়শঙ্কর বলেন, “ভারতের প্রযুক্তিগত মিশন কাবুলে দূতাবাসে উন্নীত করা হচ্ছে। এটি আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও স্বাধীনতার প্রতি ভারতের পূর্ণ প্রতিশ্রুতির প্রমাণ।”

নতুন দূতাবাসের কার্যক্রম শুরুর সময়সীমা এখনও নির্ধারিত হয়নি। তবে এই পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।