জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ স্বাক্ষরের দুই দিন আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে জরুরি বৈঠক বসাচ্ছে। এ বৈঠক বুধবার সন্ধ্যায় ৬টায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ডাকা হয়েছে।
কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানানো হয়েছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ‘অতি জরুরি’ বৈঠকে মিলিত হবে। বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য প্রত্যেক দল ও জোটের কাছ থেকে একজন করে প্রতিনিধির নাম চাওয়া হয়েছে। তবে বৈঠকের বিষয়বস্তু চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি।
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান জানান, তারা বৈঠকের চিঠি পেয়েছেন।
আগামী শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তার আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কমিশনের তরফে ৩২টি রাজনৈতিক দল ও একটি জোটের কাছে চূড়ান্ত জুলাই জাতীয় সনদ পাঠানো হয়েছে। এসব দল ও জোটের পূর্ণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের ১৭টি বিষয়ে ৮৪ দফার জুলাই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বাকি ৬৭টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ কেউ বিরোধিতা করেছে এবং ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে।
জুলাই সনদে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের ৮৪ দফার মধ্যে ৪৭টি বিষয়কে ‘সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে সংস্কার’ এবং বাকি ৩৭টি বিষয়কে ‘আইন/অধ্যাদেশ, বিধি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কার’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সংস্কারের ৮৪ দফা তুলে ধরা হয়েছে ৪০ পৃষ্ঠার সনদে, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার এবং স্বাক্ষরের জায়গাও উল্লেখ করা হয়েছে।
‘জাতি গঠনের ইতিহাস সনদে ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে’
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) দাবি করেছে, জুলাই সনদে জাতি গঠনের ইতিহাস ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। দলের সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেছেন, সংবিধানের চার মূলনীতি ঠিক না রাখলে সনদে স্বাক্ষর করা সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রশ্ন সনদের অঙ্গীকারনামা নিয়ে। বিভিন্ন দল সনদের বহু পয়েন্টে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। অথচ অঙ্গীকারনামার প্রথম পয়েন্টে বলা হয়েছে, ‘…এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করব’। স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়া বেশিরভাগ দলের পক্ষেই পূর্ণ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা সম্ভব নয়।
“দ্বিতীয় পয়েন্টে উল্লেখ রয়েছে, ‘…পূর্ণাঙ্গভাবে সংবিধানে তফসিল হিসাবে অথবা যথোপযুক্তভাবে সংযুক্ত করব’। সনদকে সংবিধানে যুক্ত করার ক্ষেত্রে আমাদের আপত্তি নেই। তবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন দলের ভিন্ন মতসহ লিখিত দলিল কীভাবে সংবিধানে যুক্ত হতে পারে, সে বিষয়ে আমরা স্পষ্ট হতে পারছি না।
“সনদে বলা হয়েছে, ‘আমরা জুলাই সনদ ২০২৫ এর বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করব না’। কিন্তু কোনো দল যদি দেখে, যে বিষয়গুলোতে তারা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে, সেগুলোই অনুমোদিত ও কার্যকর হবে, তাহলে তার পক্ষেই আদালতের শরণাপন্ন হওয়া যৌক্তিক। এই ধরনের অঙ্গীকার একটি গণতান্ত্রিক সনদে অনভিপ্রেত।”
চার মূলনীতি নিয়ে দলটি বলছে, “সংবিধানের মূলনীতির আলোচনাটি এই উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত নয়। আদর্শিক-রাজনৈতিক বিষয়গুলো আলোচনার বাইরে রাখা উচিত। কারণ এ বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য সম্ভব নয়। তাই আমরা এবং আরও তিনটি দল আলোচনার সময়ে ওয়াক আউট করেছিলাম। এছাড়া দুটি দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, এই বিষয়টি বাদ দিয়ে সনদ রচিত হবে। কিন্তু চূড়ান্ত খসড়ায় তা প্রতিফলিত হয়নি। আমাদের জাতি গঠনের ইতিহাসও সনদে ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। আমরা কমিশনকে অনুরোধ করব, সার্বিক দিক বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেবার জন্য। তা না হলে এই সনদে স্বাক্ষর করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।”