ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নিয়ে ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে

ভারত দাবি করেছে, গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে তারা পাকিস্তানের ছয়টি স্থানে নয়টি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান জানায়, তারা এসব হামলা প্রতিহত করেছে এবং ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে। এই পাল্টাপাল্টি হামলায় এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের ২৬ জন ও ভারতের ১০ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

ডিসমিসল্যাবের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত ও পাকিস্তানের এই সংঘাত নিয়ে বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে ছড়াচ্ছে বিভ্রান্তিকর ও ভুয়া তথ্য। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কিছু সংবাদমাধ্যমে।

এসব ছবি ও ভিডিওর অনেকগুলোই পুরনো বা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ধারণ করা হলেও সেগুলো বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মিলিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। ডিসমিসল্যাব ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ভুয়া দাবি ও বিভ্রান্তিকর ছবি-ভিডিও যাচাই করেছে।

একটি ভিডিও পোস্টে দাবি করা হয়, পাকিস্তান ভারতীয় পাঁচটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে এবং কয়েকজন পাইলটকে আটক করেছে। ভিডিওতে বিস্ফোরণের পর একটি বাড়িতে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। যাচাইয়ে দেখা যায়, এটি ২০২৪ সালের ১১ মার্চ ইউটিউবে আপলোড হওয়া একটি পুরনো ভিডিও, যার সঙ্গে চলমান উত্তেজনার কোনো সম্পর্ক নেই।

আরেকটি ভিডিওতে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে একটি বিমানকে ভূপাতিত করার দৃশ্য দেখিয়ে ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংসের দাবি করা হয়। ডিসমিসল্যাবের যাচাই অনুযায়ী, ভিডিওটি মঙ্গলবার রাতের নয় এবং এটি ইউটিউবে অন্তত নয় দিন আগে আপলোড করা হয়।

কিছু সংবাদমাধ্যম একটি ছবিতে আগুন ধরা একটি বিধ্বস্ত বিমান ব্যবহার করেছে, যা পরে সরিয়ে ফেলা হয়। ছবিটি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের রাজস্থানে প্রশিক্ষণের সময় মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের দুর্ঘটনার বলে নিশ্চিত হয় যাচাইয়ে।

ফেসবুকে ‘আল্লাহু আকবার, ✊পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ ক্যাপশনে আরেকটি ভিডিও দেখা যায়, যেখানে একজন ব্যক্তি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে একটি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেন। যাচাইয়ে দেখা গেছে, এটি একটি ভিডিও গেম ‘আর্মা৩’-এর দৃশ্য। ভিডিওটি ৩১ মার্চ ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছিল।

‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে’ ক্যাপশনে ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়ায়, যেখানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দৃশ্য দেখা যায় এবং ভিডিওর ওপরের ডান পাশে ‘ইন্ডিয়া’ লেখা থাকে। যাচাইয়ে দেখা গেছে, এটি ভারতের নয়, বরং ২০২৪ সালের অক্টোবরে ইরানে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার একটি ভিডিও, যা ইরান ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সির টুইটার হ্যান্ডলে প্রকাশিত হয়।

আরেকটি ভিডিওতে সেনা মহড়া ও গোলা নিক্ষেপের দৃশ্যকে ভারতের সাম্প্রতিক হামলা হিসেবে প্রচার করা হয়। ডিসমিসল্যাব জানায়, এটি ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি ইউটিউবে পোস্ট হওয়া একটি ভিডিও, যেখানে দেবলালি রেঞ্জে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মহড়ার দৃশ্য দেখানো হয়েছে।

ফেসবুকে ছড়ানো আরেকটি ভিডিওতে একটি এলাকায় বোমা হামলা ও মানুষের দৌড়ানোর দৃশ্য দেখা যায়। একে পাকিস্তানে ভারতের হামলা হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। যাচাইয়ে দেখা গেছে, এটি ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলার ভিডিও, যা আল-জাজিরার প্রতিবেদন থেকে নেওয়া।

একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ভারতের যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে এবং ভারতীয় পাইলটকে ক্ষুব্ধ জনতা আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। ভিডিওতে একটি বিধ্বস্ত বিমানে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। যাচাইয়ে দেখা যায়, এটি চলতি বছরের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা। ভিডিওর পরবর্তী অংশে ভারতের মধ্যপ্রদেশে ফেব্রুয়ারিতে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ভিডিও যোগ করা হয়েছে।