খুলনায় ১৪ বছর পর নতুন কারাগার চালু, দুই কারাগারের দায়িত্ব একই কর্মকর্তাদের

দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে নির্মাণাধীন খুলনার নতুন কারাগার শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়েছে। আপাতত জনবল সংকটের কারণে সাজাপ্রাপ্ত ১০০ বন্দিকে নিয়েই কারাগারের কার্যক্রম শুরু হবে। পাশাপাশি পুরনো কারাগারের কার্যক্রমও চলমান থাকবে।

খুলনা জেলা কারাগারের জেলা মোহাম্মদ মুনীর হুসাইন বলেন, সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খুলনায় দুটি কারাগার একসাথে চালু রাখা হবে। আপাতত বর্তমান কারাগারের কর্মকর্তারাই দুটো কারাগারের দায়িত্ব পালন করবেন।

খুলনার প্রথম কারাগার ১৯১২ সালে ভৈরব নদীর তীরে নির্মিত হয়। তখনকার বন্দি ধারণক্ষমতা ছিল ৬৭৮ জন, কিন্তু বর্তমানে সেখানে এক হাজার ৪০০ এর বেশি বন্দি রয়েছেন। ১১৩ বছরের পুরনো, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বন্দিদের থাকার বিষয়টি বিবেচনা করে নতুন কারাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নতুন কারাগারের প্রকল্প অনুযায়ী, এখানে মোট ৫৭টি স্থাপনা রয়েছে। শুধুমাত্র বন্দি রাখার জন্য নির্মিত ভবন সংখ্যা ১১টি। ভবিষ্যতে এই কারাগারে সর্বোচ্চ চার হাজার বন্দি রাখা সম্ভব। প্রকল্পের আওতায় আপাতত দুই হাজার বন্দি রাখার অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে প্রয়োজন অনুযায়ী পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে আরও অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।

জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, “কারাগার পরিচালনার জন্য ৬০০ জনের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ২০৮ জনবল রয়েছে। নতুন করে ৪৪ জনকে পদায়ন করা হয়েছে। আপাতত এই জনবল দিয়েই দুটি কারাগারের কার্যক্রম চালানো হবে।”

জেল সুপার আরও জানান, নতুন কারাগারে জেলার নয়টি উপজেলার বন্দিদের রাখা হবে, আর পুরনো কারাগারে থাকবে খুলনা নগরের বন্দিরা। বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের পৃথক স্থানে রাখা হবে। কিশোর ও কিশোরী বন্দিদের জন্য পৃথক ব্যারাক রয়েছে। নারীদের জন্য রয়েছে পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার এবং ওয়ার্ক শেড।

নতুন কারাগারটি খুলনা সিটি বাইপাস সড়কের জয় বাংলা মোড়ের কাছাকাছি, আসানখালী এলাকায় প্রায় ৩০ একর জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১১ সালে। ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে খুলনা জেলা প্রশাসন জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করে। ২৬ কোটি ৫৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকায় ৪১২ জনের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করা হয়।

প্রকল্পটি শুরু থেকেই নানা প্রশ্নের মুখে ছিল। এতে আটবার সময় বৃদ্ধি, দুই দফা সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২৮৮ কোটি টাকা। কাগজে-কলমে প্রকল্পের কাজ শেষ দেখানো হয় গত বছরের জুনে, তবে বাস্তবে কাজ এখনও চলমান রয়েছে।