ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ১০টিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে প্রথমবারের মতো ছয়জন নতুন প্রার্থী ধানের শীষের প্রতীকে লড়বেন, আর দুইজন পেয়েছেন দলের মনোনয়ন তাদের প্রয়াত নেতাদের উত্তরসূরি হিসেবে।
সোমবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে ২৩৭ জন প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছেন, তাতে চট্টগ্রামের চারটি আসনে ২০১৮ সালের প্রার্থীদেরই পুনরায় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে দলীয় বিবেচনা ও জোটগত সমীকরণের কারণে ছয়টি আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।
মির্জা ফখরুল সংবাদ সম্মেলনে জানান, এসব আসনের মধ্যে একটি আসনে প্রথমে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হলেও পরে তা ফাঁকা রাখা হয়েছে।
পুরনো মুখ ও নতুন ভরসা
চট্টগ্রাম-১, ১২ ও ১৩ আসনে ২০১৮ সালের প্রার্থীরাই দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। আর চট্টগ্রাম-১০ আসনে আগেরবার অন্য আসন থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্যকে এবার আনা হয়েছে।
তবে চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) ও চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী) আসনে এখনো মনোনয়ন ঘোষণা হয়নি, কারণ এসব আসনে একাধিক শক্তিশালী নেতার আগ্রহ রয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যৎ জোট গঠনের কথা বিবেচনায় চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া আংশিক) এবং চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনও আপাতত খালি রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম জানান, “বাকি ছয় আসনের প্রার্থী দ্রুত ঘোষণা করা হবে। জোটগত সমন্বয়ের বিষয়ও বিবেচনায় আছে।”
তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম-১৪ আসনটি জোটগতভাবে ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
২০১৮ সালেও এই দুই আসন (চট্টগ্রাম-১৪ ও ১৫) বিএনপি জোটসঙ্গীদের ছেড়ে দিয়েছিল—চট্টগ্রাম-১৪ আসনে এলডিপির অলি আহমদ এবং চট্টগ্রাম-১৫ আসনে জামায়াতের আ ন ম শামসুল ইসলাম ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন।
চার পুরনো প্রার্থী
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ঐক্যফ্রন্টের ১৬টি আসনের মধ্যে ১২টিতে বিএনপির প্রার্থী ছিল, দুটি আসনে এলডিপি, একটি জামায়াতে ইসলামীর ও একটি কল্যাণ পার্টির প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে আগেরবারের মতো এবারও বিএনপির প্রার্থী নুরুল আমিন। তিনি উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এবং উপজেলা চেয়ারম্যান।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে পুনরায় মনোনয়ন পেয়েছেন ব্যবসায়ী নেতা ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে ২০১৮ সালের প্রার্থী সারোয়ার জামাল নিজামের ওপরই আস্থা রেখেছে দল।
আর চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, পাহাড়তলি, হালিশহর ও খুলশী) আসনে প্রয়াত আবদুল্লাহ আল নোমানের স্থলে এবার দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
প্রথমবারের প্রার্থীরা
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মো. আজিম উল্লাহ বাহারকে সরিয়ে এবার প্রার্থী করা হয়েছে উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার আলমগীরকে।
শিল্পাঞ্চলখ্যাত চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে আসলাম চৌধুরীর স্থলে প্রার্থী হয়েছেন কাজী সালাউদ্দিন, যিনি উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে এবার প্রার্থী হয়েছেন ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন—দলটির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাছির উদ্দিনের ছেলে।
রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম-৭) আসনে সাবেক নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পুত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে প্রার্থী করেছে বিএনপি।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে আগের প্রার্থী আবু সুফিয়ানের পরিবর্তে এবার প্রার্থী হয়েছেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে প্রয়াত জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা পেয়েছেন দলের মনোনয়ন।
ফাঁকা ছয় আসন
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে সোমবারের ঘোষণায় প্রথমে আবু সুফিয়ানের নাম এলেও পরে তা বাতিল করা হয়। ফলে আসনটি এখনো ফাঁকা।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনেও কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি, যদিও এই আসনে সাঈদ আল নোমানসহ কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে সাতজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন, যার মধ্যে সাবেক সাংসদ মোস্তফা কামাল পাশাও আছেন, তবে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে দলের দুই প্রভাবশালী নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গোলাম আকবর খন্দকার প্রার্থী হতে আগ্রহী। দুই পক্ষের সংঘাতের কারণে এই আসনের নামও স্থগিত রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া আংশিক) আসনে ডা. মহসিন জিল্লুর করিম, নুরুল আনোয়ার চৌধুরী, নাজিম উদ্দিন চৌধুরী ও শফিকুল ইসলাম রাহী মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেও এখানেও কোনো প্রার্থী ঘোষণা হয়নি।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনেও প্রার্থী নির্ধারণ বাকি রয়েছে। এখানে কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন—অধ্যাপক শেখ মো. মহিউদ্দিন, জামাল হোসেন, নাজমুল মোস্তফা আমিন ও মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, কিছুদিন আগে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে চট্টগ্রামের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বৈঠক হয়েছিল। সেখানে অনেকের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে, আবার কয়েকটি আসন এখনো আলোচনায় আছে।
