পারমাণবিক সতর্কবার্তায় এনসিএর জরুরি বৈঠক ডাকল পাকিস্তান

ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর পর পাকিস্তান আজ শনিবার জানায়, দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনা সংস্থা ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটির (এনসিএ) জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে।

আজ ভোরে পাকিস্তান ভারতের একাধিক সামরিক ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এর মধ্যে ভারতের একটি ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণাগারেও হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি ইসলামাবাদের।

এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ দেশটির শীর্ষ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত এনসিএর এ বৈঠক ডাকেন। সংস্থাটি পারমাণবিক অস্ত্রসংক্রান্ত নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এমন বৈঠক সংঘাত আরও গভীরতর হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। স্টিমসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক আসফান্দিয়ার মির বলেন, ‘এটি একধরনের পারমাণবিক সতর্কবার্তা, যা পাকিস্তানের “প্রথম ব্যবহার” নীতির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাস্তব অর্থে এটি আমাদের যুদ্ধের শঙ্কা বৃদ্ধির ঝুঁকিকে অনেক ওপরের ধাপে নিয়ে গেছে। আগে কখনো এমনটি হয়নি।’

এদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী অভিযোগ করেছে, পাকিস্তান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ড্রোন ও গোলাবারুদ ব্যবহারের মাধ্যমে হামলা চালিয়ে উত্তেজনা বাড়িয়ে চলেছে। ভারত একে ‘স্পষ্ট আগ্রাসন’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে, পাকিস্তানের ‘শত্রুতামূলক ষড়যন্ত্র’ প্রতিহত করা হবে।

ভারতীয় পুলিশ দাবি করেছে, পাকিস্তানের হামলায় কাশ্মীরের জম্মু অঞ্চলে পাঁচজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

গত বুধবার থেকে চলতে থাকা এই পাল্টাপাল্টি হামলাকে গত তিন দশকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে ওঠায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের সামরিক অভিযান ছিল ভারতের আগের হামলার প্রতিশোধ। ইসলামাবাদ ও আশপাশের এলাকা লক্ষ্য করে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। তবে পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে পেরেছে।

ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, পাকিস্তানের একাধিক সশস্ত্র ড্রোন পাঞ্জাবের অমৃতসরের আকাশে দেখা গেছে। সেগুলো ভূপাতিত করা হয়েছে।

পাকিস্তানের পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করছি না। আমাদের লক্ষ্য কেবল সেসব জায়গা, যেখান থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কাজ করা হয়েছে।’

পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণাগার ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া পাঠানকোট বিমানঘাঁটি ও কাশ্মীরের উধমপুর বিমানঘাঁটিতেও আঘাত হানা হয়েছে।

ভারতের শ্রীনগর ও জম্মুতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এ সময় সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে ওঠে।

ভারত দাবি করেছে, পাকিস্তানের হামলার পাল্টা জবাবে কয়েকটি ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে তারা আকাশ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। লক্ষ্যবস্তু ছিল নুর খান, মুরিদ ও শোরকোট ঘাঁটি। এর মধ্যে একটি ইসলামাবাদের কাছেই অবস্থিত।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী দাবি করেছেন, অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় ধরা পড়েছে। আর যে কয়টি ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছেছে, তা তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *