৭৫ বছরে সংবাদ: বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার অঙ্গীকারে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

অসাম্প্রদায়িকতা ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার আদর্শকে অবলম্বন করে যাত্রা শুরু করেছিল দেশের প্রাচীনতম দৈনিক ‘সংবাদ’। এই আদর্শে অবিচল থাকার প্রত্যয় পুনরায় ব্যক্ত করেছেন সংবাদ পরিবারের সদস্যরা।

প্রকাশনার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার পুরানা পল্টনে সংবাদ কার্যালয়ে এক আনন্দঘন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নবীন-প্রবীণ সদস্যদের প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে মিলনমেলায় রূপ নেয় আয়োজনটি। এ সময় সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সংবাদ সম্পাদক আলতামাশ কবির। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার করিম।

বক্তব্যে আলতামাশ কবির বলেন, “বাংলাদেশে যারা গণমাধ্যম শিল্পের সঙ্গে যুক্ত, বিশেষ করে প্রবীণ ও নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিরা, তারা প্রায়ই বলেন—মুক্ত সাংবাদিকতার সূচনায় যে অল্প কয়েকটি পত্রিকা ভূমিকা রেখেছে, তার মধ্যে সংবাদ অন্যতম। পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকতার বিকাশেও সংবাদের অগ্রগণ্য অবদান সবাই স্বীকার করেন। আমরা সেই ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখতে চাই।”

১৯৫১ সালের ১৭ মে ব্যবসায়ী আলহাজ গিয়াসউদ্দিন আহমেদের মালিকানায় এবং খায়রুল কবিরের সম্পাদনায় ‘সংবাদ’ প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালে পত্রিকাটি কিনে নেয় মুসলিম লীগ। ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের ভরাডুবির পর ‘সংবাদ’ প্রকাশনায় স্থবিরতা দেখা দেয়। সেই সময় বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা আহমদুল কবির পত্রিকাটি কিনে নেন। তার উদ্যোগেই ১৯৫৪ সালে গঠিত হয় ‘দি সংবাদ লিমিটেড কোম্পানি’। এরপর শুরু হয় সংবাদের প্রগতিশীল রূপান্তরের ধারা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত, ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

দীর্ঘকাল ধরে সংবাদ দেশ ও মানুষের রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক জীবনের তথ্য তুলে ধরে অসাম্প্রদায়িক ও আদর্শবাদী সাংবাদিকতার মুখপত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। প্রগতিমনা সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিকদের অনেকেই গত ৭৪ বছরে এই পত্রিকার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংস্পর্শে এসেছেন। মানবতার স্বরূপ সন্ধানে সদা সচেষ্ট ‘সংবাদ’ প্রগতিবাদী ধারার পত্রিকা হিসেবে দেশে মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে শাণিত করেছে।

১৯৫৪ সাল থেকে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারক ও বাহক হিসেবে ‘সংবাদ’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি জাতির গুরুত্বপূর্ণ সব সংগ্রামের সঙ্গে একাত্ম থেকেছে। মাথা নত না করে নির্ভীকভাবে এগিয়ে যাওয়ার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যকে বজায় রেখেছে পত্রিকাটি।

দীর্ঘ পথচলায় ‘সংবাদ’ যেসব কৃতী সাংবাদিকের মেধা ও সৃজনশীলতায় আলোকিত হয়েছে এবং যারা জাতির মনন গঠনে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন—নাসির উদ্দিন আহমেদ, খায়রুল কবির, আহমদুল কবির, রণেশ দাশগুপ্ত, সত্যেন সেন, সৈয়দ নুরুদ্দিন, জহুর হোসেন চৌধুরী, আবু জাফর শামসুদ্দিন, শহীদল্লাহ কায়সার, তোহা খান, সন্তোষ গুপ্ত, বজলুর রহমান প্রমুখ।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করার পর তাদের কালো হাত ‘সংবাদ’-কেও ছাড়েনি। মার্চ মাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় সংবাদ কার্যালয়। ২৮ মার্চ পত্রিকা অফিসের সঙ্গেই পুড়ে শহীদ হন সাংবাদিক শহীদ সাবের। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নানা হুমকি ও প্রলোভনের মুখেও ‘সংবাদ’ আর প্রকাশিত হয়নি। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পত্রিকাটি পুনরায় প্রকাশিত হয়।

সাংবাদিকতায় বহুমাত্রিক অবদানের জন্য প্রথমবারের মতো সংবাদ পেয়েছে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *