স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের বেশ কিছু পণ্য ভারতে প্রবেশে সেদেশের নিষেধাজ্ঞার পরদিন পণ্য বোঝাই ৩৬টি বাংলাদেশী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে আটকা পড়েছে।
তবে ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়াড়িং এজেন্ট ষ্টাফ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তি বলেন, যে সব পণ্যের এলসি/টিটি ইতিমধ্যে হয়ে গেছে সে সকল পণ্য যাতে আমদানি করা যায় তার জন্য কাস্টমসে আলোচনা চলছে।
ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর (ডিজিএফটি) শনিবার বাণিজ্যের ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তাতে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, গার্মেন্টস/তৈরি পোশাক পণ্যসহ সাত ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
ওই নিষেধাজ্ঞা আদেশে বাংলাদেশ থেকে ওইসব পণ্য শুধু সমুদ্রপথে সেখানকার ব্যাবসায়ীরা আমদানি বা বাংলাদেশ রপ্তানি করতে পারবে বলে জানানো হয়।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের এক মাসের মাথায় ভারতের এই পাল্টা নিষেধাজ্ঞা এল, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করার কথা বলেছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বেনাপোলের কয়েকজন রপ্তানিকারক জানান, স্থলপথে পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে কার্যত ভারতের সঙ্গে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি বলেন অনেকেই বেনাপোল ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে বিভিন্ন পণ্য কলকাতায় রপ্তানি করেন। সেটা বন্ধ হয়ে গেল। নৌপথে পণ্য পরিবহন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এতে খরচের পাশাপাশি সময়ের কারণে তাদের পক্ষে বাণিজ্য করা সম্ভব হবে না বলে জানান তারা।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, স্থলপথে এসব পণ্য রপ্তানিতে খরচ অনেক কম হতো কিন্তু সমুদ্র ও বিমান পথে পণ্য রপ্তানিতে খরচ অনেক বেশি হবে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক এমদাদুল হক জানান, বছরে ১০ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয় ভারতে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেশিরভাগ আমদানিকারক বেনাপোল বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। এ পথে রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, পাট, পাটের তৈরিপণ্য, গার্মেন্টস, তৈরি পোশাক, কেমিকেল, বসুন্ধারাটিসু, মেলামাইন, মাছ উল্লেখ্যযোগ্য।
বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, ‘এ সংক্রান্ত কোন চিঠি আমরা পাইনি। পত্রিকায় দেখেছি। বেনাপোল বন্দর দিয়ে শনিবার পর্যন্ত সকল পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তবে রোববার সকাল থেকে অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হলেও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, পোশাক জাতীয় কোন পণ্য রপ্তানি হয়নি। বিভিন্ন ভাবে জানতে পেরেছি ৩০/৩৫ ট্রাক পণ্য এখানে আটকে আছে।’
গত বছর (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১৭ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকার পণ্য ভারতে রপ্তানি করে। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে রপ্তানি করেছে ১৭ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার পণ্য।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে রপ্তানি হয়েছে ১১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকার পণ্য। যেসব দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে, তার মধ্যে ভারত একটি, যেখানে প্রতিবছর প্রায় ৭০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। এর মধ্যে ৯৩ শতাংশের মত পোশাক পণ্য স্থলপথেই রপ্তানি হয়। ফলে ভারতের নতুন নিষেধাজ্ঞা এ খাতের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দেখা দেবে বলে ব্যবসায়ীদের শঙ্কা।