রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটির ১৬ নেতা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদত্যাগ

সংগঠনের কয়েক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটির ১৬ নেতা।

রোববার রাত ৮টায় রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে সংবাদ সম্মেলনে এসে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তারা। সেখানে তাদের সঙ্গে প্রায় অর্ধশত কর্মীও সংগঠন ছাড়ার ঘোষণা দেন।

পদত্যাগ করা নেতাদের অভিযোগ, কমিটির কয়েকজন শীর্ষ নেতা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ-বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। তারা কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব বিষয়ে সংগঠনের সদস্যরা জানতে চাইলেও শীর্ষ নেতারা কোনো জবাব দেননি।

পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া মহানগর কমিটির নেতাদের মধ্যে রয়েছেন—মহানগর কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব সিয়াম আহসান আয়ান, সংগঠক আদনান সামির, মাহদী হাসান অনিক, রাতুল, এনায়েত রাব্বি, সদস্য আরাফাত সানি আপন, আল শামস সিয়াম, আল আমিন, সীমান্ত হোসেন, মোজাহিদ ও আল তানজীল আহসান।
জেলা কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন সদস্য মুবতাসিম ফুয়াদ সাদিদ, জুনাইদ ইসলাম সাদিদ, সুজন সাহ, মাহতাব হোসেন আবির ও সাওম মাহমুদ সিরাজ।

পদত্যাগপত্রে তাঁরা লিখেন, ‘রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবসহ কিছু নেতার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এবং তার সপক্ষে পাওয়া প্রমাণ আমাদের আন্দোলনের মূল চেতনা ও আদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
“এই গুটিকয়েক নেতার অপকর্মের দায় আমরা যারা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে গেছি, তাদের ওপরও বর্তায়—যা অত্যন্ত লজ্জাজনক ও অপমানজনক।”

মহানগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আয়ান হাসান বলেন, “পুরো বাংলাদেশের মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রেখেছিল। কিন্তু আমরা সে বিশ্বাস রাখতে পারিনি। মহানগর ও জেলা কমিটির নেতারা টেন্ডার-বাণিজ্য, জমির দালালি, মামলা-বাণিজ্য ও মেলায় জুয়ার আসর থেকে চাঁদা আদায়সহ নানা অপকর্ম করছে।”

তিনি বলেন, “জেলা ও মহানগর কমিটির শীর্ষ কয়েকজন নেতা আছেন, যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে যোগ দিয়েছিলেন।”

পদত্যাগ করা জেলা কমিটির সদস্য মাহতাব হোসেন আবির বলেন, “দুই মাস আগে নগরীর ঘাঘট এলাকায় বাণিজ্য মেলায় হাউজি জুয়ার আসর বসানো হয়। সেখান থেকে জেলা ও মহানগর কমিটি নেতারা ১৪ লাখ টাকা চাঁদা নেন।
“এছাড়া রংপুর সিটি করপোরেশনের ২৫ জনকে নিয়োগ দিয়ে লাখ লাখ টাকার নিয়োগ-বাণিজ্য করেছেন।”

এর আগে গত বছর বন্যার্তদের জন্য তোলা ত্রাণের ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও তোলেন তিনি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার। আগামীকাল সংবাদ সম্মেলন করে পুরো বিষয় স্পষ্ট করা হবে।”

মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো অপকর্মে আমি জড়িত নই। তারা যদি এ ধরনের কোনো অভিযোগ করে, তাহলে প্রমাণ হাজির করুক।
“অবশ্যই কারও না কারও স্বার্থে আঘাত লেগেছে—এ জন্য এমনটা হতে পারে। এটা নিয়ে সবার সঙ্গে বসে আলোচনা করে লিখিত বক্তব্য জানানো হবে।”

গত বছরের ২৪ নভেম্বর ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতিকে আহ্বায়ক ও রহমত আলীকে সদস্যসচিব করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের ১১২ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
ইমরান আহমেদকে আহ্বায়ক ও ডা. আশফাক আহমেদ জামিলকে সদস্যসচিব করে গঠন করা হয় ১৫৫ সদস্যের জেলা কমিটি।

এর আগে জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান ও সদস্যসচিব আশফাকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেন মাহমুদুর রহমান লিওন নামের এক সদস্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *