সাবেক এনএসআই ডিজির সম্পদ কেলেঙ্কারি: এনবিআর সদস্যসহ দুজনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) অধিপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক টি এম জোবায়েরের অবৈধ সম্পদ স্থানান্তরের চেষ্টার অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একজন সদস্যসহ দুজনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা দুই ব্যক্তি হলেন—জোবায়েরের ভায়রা খন্দকার আবুল কাইয়ূম এবং এনবিআর সদস্য আবু সাঈদ মো. মুস্তাক।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

এদিন একই আদালত প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক শেখ মামুন খালেদ এবং তার স্ত্রী নিগার সুলতানা খালেদের বিদেশ যাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

দুদকের পরিচালক মো. মনজুর আলমের আবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাবেক এনএসআই প্রধান জোবায়েরের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে লন্ডনে ২৯ লাখ ৪৫ হাজার পাউন্ডে বাড়ি কেনাসহ বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে। এসব অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এনবিআর সদস্য আবু সাঈদ নিজ উদ্যোগে এবং খন্দকার আবুল কাইয়ূম বিভিন্ন পন্থায় ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে জোবায়েরের অবৈধ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অন্যত্র হস্তান্তর বা স্থানান্তরের চেষ্টা করেন। তারা দুজন দেশত্যাগ করতে পারেন বলেও দুদক জানতে পেরেছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন বলে কমিশন মনে করে।

গত বছরের ৬ অক্টোবর জোবায়ের এবং তার স্ত্রী ফাহমিনা মাসুদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। এরপর গত ২১ এপ্রিল জোবায়েরের ট্রাস্ট ব্যাংকের পাঁচটি হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, অবৈধ শেয়ার ব্যবসা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক শেখ মামুন খালেদ ও তার স্ত্রী নিগার সুলতানার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন দুদকের পরিচালক এস এম এম আখতার হামিদ ভূঞা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা দেশত্যাগ করতে পারেন, তাই সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে এ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন।

এছাড়া, অভিনেত্রী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদসহ ১২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম ছানাউল্ল্যাহ বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. পিন্টুর আবেদনের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা অন্য আসামিরা হলেন—ডিএমপির সিটিটিসি ইউনিটের সাবেক এডিসি নাজমুল ইসলাম, শাওনের বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী, বোন মাহিন আফরোজ শিঞ্জন, সেঁজুতি, সাব্বির, সুব্রত দাস, মাইনুল হোসেন, পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া, এসআই শাহ আলম এবং মোখলেছুর রহমান মিল্টন।

সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া ও শাহ আলম জামিনে থাকায় আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। বাকি আসামিদের বিরুদ্ধে গত ২২ এপ্রিল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী তারিখ ১ জুলাই ধার্য করা হয়েছে।

জানা যায়, গত ১৩ মার্চ শাওনের সৎ মা নিশি ইসলাম হত্যাচেষ্টা ও মারধরের অভিযোগে ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০২৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ৫০ লাখ টাকা দেনমোহরে মোহাম্মদ আলী নিশিকে বিয়ে করেন। পরে ৪ মার্চ গুলশানে ডেকে নিয়ে তাকে আগের স্ত্রী দেখান ও প্রতারণার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। সেখানে নিশিকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। পরদিন সাদা কাগজে স্বাক্ষরের জন্য চাপে রাখা হয়। শাওন তাকে মারধর করলে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।

২৪ এপ্রিল ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে পুনরায় মারধরের অভিযোগও মামলায় রয়েছে। সেই সময় ডিবি প্রধান হারুন বাড্ডা থানায় মামলা নিতে বলেন এবং নিশিকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়।

এছাড়া ৬ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডি এলাকা থেকে শাওনকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে’ জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করে পুলিশ। পরদিন তাকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।


 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *