কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলায় হামলা-ভাঙচুর, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বন্ধ

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা চাপাইগাছি বাজারে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘গাজী কালু-চম্পাবতী মেলায়’ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। পরে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মেলাটি বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানান কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ।

সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও জগন্নাথপুর ইউনিয়ন উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, কুদ্দুস প্রামাণিক (৭০), তুহিন হোসেন, জিহাদ হোসেন, জামাত আলী ও ইউনুস আলীর নাম জানা গেছে। তারা কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

অন্যদিকে আহত বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে রয়েছেন খোকসা সরকারি কলেজের প্রভাষক সরাফাত সুলতান, বাঁখই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক টিপু সুলতান, সুকুর শেখ, শরীফ ও আসাকুর রহমান। তারা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, প্রতি বছরের মতো এবারও স্থানীয়দের উদ্যোগে মেলার আয়োজন করা হয়। তবে মেলা শুরুর আগে থেকেই জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা মাদকের ব্যবহার, জুয়া ও অশ্লীলতার অভিযোগ এনে বিরোধিতা করে আসছিলেন। প্রশাসনিক অনুমোদন না পেলেও ১৭ মে মেলা শুরু করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

প্রতিদিন জারি-সারি ও বাউল গান চললেও মেলার আয়োজনে দোকানপাট বসে এবং স্থানীয়দের আনাগোনায় জমজমাট হয়ে ওঠে। সাতদিন ধরে গান চললেও মেলা সাধারণত ১৫ থেকে ২০ দিন স্থায়ী হয়।

মঙ্গলবার বিকাল থেকে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়, যা সন্ধ্যায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়।

স্থানীয় শিক্ষক কবিরুল ইসলাম বলেন, “মেলা শুরুর আগে থেকেই জামায়াত মেলার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। অনুমোদন না পেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা মেলা শুরু করলে সংঘর্ষ বাধে।”

একজন ব্যবসায়ী জানান, “জামায়াত-শিবিরের কয়েকশ নেতাকর্মী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। প্রায় ৩০টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এসব ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রয়েছে।”

হাবিবুর রহমান বলেন, “মেলায় অশ্লীলতা ও জুয়ার কারণে প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। তারপরও আয়োজন করা হয়। আমরা জানতে গেলে প্রতিপক্ষ হামলা চালায়। এতে আমি ও উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আফজাল হোসাইনসহ অনেকে আহত হই।”

মেলার পক্ষে থাকা প্রভাষক সরাফাত সুলতান বলেন, “জামায়াতের শত শত লোক অতর্কিতে হামলা চালিয়ে দোকানপাট ভাঙচুর ও লুট করেছে। ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “শত বছর ধরে চলে আসা মেলাটি আমরা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। জামায়াত বহুবার বাধা দিলেও এবার বড় আকারে আক্রমণ করে।”

স্থানীয় কলা ব্যবসায়ী নাদের শেখ (৬৫) বলেন, “এই মেলায় প্রথমবারের মতো দুই পক্ষের সংঘর্ষ দেখলাম। জামায়াতের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালালে সবাই আতঙ্কে পালায়। পরে ফিরে এসে দেখে দোকানের মালামাল লুট হয়ে গেছে।”

অভিযোগ অস্বীকার করে জামায়াত নেতা আফজাল হোসাইন বলেন, “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়।”

ওসি মো. সোলায়মান শেখ বলেন, “প্রশাসনিক অনুমোদন না থাকায় মেলা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। এর জেরে সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ অভিযোগ দেয়নি। শুনেছি তারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করেছে।”

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি বা ক্ষুদে বার্তার জবাব দেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *