কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় টানা চতুর্থ রাত ভারত-পাকিস্তান সেনাদের গোলাগুলি

কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গতকাল রোববার দিবাগত রাতেও গোলাগুলি হয়েছে। শ্রীনগরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার পর এ নিয়ে টানা চতুর্থ রাত গোলাগুলির ঘটনা ঘটল।

আজ সোমবার ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নিয়ন্ত্রণরেখাজুড়ে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ‘বিনা উসকানিতে’ ছোড়া গুলির জবাব দিয়েছে তারা।

গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীরা গুলি চালিয়ে ২৬ পর্যটককে হত্যা করে। ভারত অভিযোগ করেছে, হামলায় জড়িত তিনজন অস্ত্রধারীর মধ্যে দুজন পাকিস্তানি। তবে পাকিস্তান এ ঘটনায় তাদের কোনো সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

পেহেলগামে হামলা ভারতজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও শোকের জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, পাকিস্তান কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়। কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের মধ্যে অতীতে দুবার যুদ্ধ হয়েছে।

হামলার পর পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশ পরস্পরের বিরুদ্ধে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। ভারত সিন্ধু নদীর পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে এবং পাকিস্তান ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রোববার দিবাগত রাতে ৭৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ নিয়ন্ত্রণরেখার একাধিক পাকিস্তানি সেনা চৌকি থেকে বিনা উসকানিতে গুলি ছোড়া হয়। এর জবাবে ভারত ছোট অস্ত্র দিয়ে পাল্টা গুলি চালায়। তবে হতাহতের বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কাছে জানতে চাওয়া হলেও তারা কোনো মন্তব্য করেনি।

পেহেলগামে হামলার পর ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশজুড়ে একাধিক সামরিক মহড়া চালিয়েছে। প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, এর কিছু মহড়া নিয়মিত প্রস্তুতির অংশ।

একজন স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গিদের সন্ধানে প্রায় এক হাজার বাড়ি ও বনাঞ্চলে তল্লাশি চালানো হয়েছে। এ সময় প্রায় ৫০০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় এবং অন্তত নয়টি বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতারা অভিযানের সময় সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন, যেন নিরপরাধ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন, ‘এমন কোনো ভুল পদক্ষেপ, যা মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে, তা এড়িয়ে চলার সময় এসেছে। দোষীদের শাস্তি দিন, কিন্তু গণহারে নিরপরাধ মানুষের ক্ষতি হতে দেবেন না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *