ফারুক আহমেদকে ঘিরে দিনভর নানা আলোচনা-সমালোচনার পর রাতে এলো বড় খবর। বিসিবি পরিচালক হিসেবে তার মনোনয়ন বাতিল করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। ফলে বিসিবি সভাপতির পদে থাকার শর্তও তিনি হারিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় এই সিদ্ধান্তের কথা।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিসিবিতে পরিবর্তনের অংশ হিসেবে ২১ আগস্ট এনএসসির মনোনয়নে পরিচালক হন ফারুক। পরে সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ৯ মাস পর সেই মনোনয়ন বাতিল করে দিল এনএসসি।
বিসিবি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সভাপতি হতে হলে পরিচালকের পদে থাকা বাধ্যতামূলক। নির্বাচিত পরিচালকদের পাশাপাশি এনএসসির মনোনয়নে দুইজন সরাসরি বোর্ডে যুক্ত হন। নাজমুল হাসানের শেষ মেয়াদে এ ক্যাটাগরিতে ছিলেন আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ও জালাল ইউনুস। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর জালাল পদত্যাগ করেন, আর সাজ্জাদুলের মনোনয়ন বাতিল হয়। ওই দুটি শূন্য পদের একটিতে আসেন ফারুক, অন্যটিতে নাজমুল আবেদীন।
পরিচালকদের ভোটে বিসিবি সভাপতি নির্বাচিত হয়ে থাকেন। নাজমুল হাসান টানা তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ফারুকও প্রতিদ্বন্দ্বীহীনভাবে সভাপতি হন। কিন্তু বছর না ঘুরতেই হারালেন আস্থা।
বুধবার রাতে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে বৈঠকে জানানো হয়, বিসিবির নেতৃত্বে পরিবর্তন চায় তারা। ফারুক বৃহস্পতিবার জানান, তিনি পদত্যাগের কোনো কারণ দেখছেন না। এর মধ্যেই আটজন পরিচালক তার বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে চিঠি দেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে। ফারুক পাল্টা বলেন, গঠনতন্ত্রে অনাস্থা চিঠির সুযোগ নেই এবং ওই আটজনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনেন।
মনোনয়ন বাতিল করে এনএসসির যুগ্মসচিব আমিনুল ইসলামের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “৮ জন পরিচালক অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করায় এবং বিপিএল সংক্রান্তে গঠিত সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার প্রয়োজনে” এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পরিচালক না থাকায় ফারুক সভাপতি পদে থাকার আইনগত ভিত্তি হারিয়েছেন। কোনো নিয়মের ফাঁকে তিনি দায়িত্বে থাকতে পারেন কি না, তা এখন প্রশ্ন। বিসিবির ইতিহাসে এমন নজির নেই।
নিয়ম নিয়ে নিজেও অনিশ্চিত ফারুক আহমেদ বলেন, “এখনই কিছু বলতে চাই না। তবে এখনও পদত্যাগ করিনি। আমার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।”
সম্ভাব্য নতুন সভাপতি হিসেবে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নাম আলোচনায়। তিনি জানান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বিসিবিতে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছে এবং তিনি যেকোনো দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। যদিও সভাপতির কথা সরাসরি বলেননি, তবে বোর্ডে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি নির্বাচন করবেন না এবং দীর্ঘমেয়াদি দায়িত্বেও থাকবেন না বলে জানিয়েছেন।
আগামী অক্টোবরের মধ্যে বিসিবি নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এনএসসির মনোনয়নে আমিনুল হবেন বোর্ড পরিচালক। এজন্য কাউন্সিলর হওয়া জরুরি, যা আগে থেকেই ছিলেন ফারুক। এবার সেই শর্তও পূরণ করে এনএসসি আমিনুলকে এক কাউন্সিলরের পরিবর্তে কাউন্সিলর করেছে। বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এনএসসি সর্বোচ্চ পাঁচজন কাউন্সিলর মনোনয়ন দিতে পারে।
তবে কাউন্সিলর পরিবর্তনের জন্য বিসিবির সভায় অনুমোদনের প্রয়োজন হয়, যা এখনও আমিনুলের ক্ষেত্রে সম্পন্ন হয়নি।