চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং গত ১৫ বছরের দুর্নীতির কারণে দেশের আর্থিক খাত ‘অত্যন্ত খারাপ’ অবস্থায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু।
শনিবার ঢাকায় আয়োজিত ‘বাজেট ভাবনা ২০২৫-২৬’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের আর্থিক খাতে দুটি সমস্যা রয়েছে। একটি হচ্ছে ব্যাংকের পরিচালন পর্ষদের রাজনৈতিক সহায়তায় চালানো লুটপাট, যা বিগত ১৫ বছর ধরে চলছে। দ্বিতীয়ত, আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ এখন আইসিইউতে। বিনিয়োগকারী তার বিনিয়োগ ফেরত পাচ্ছে না।”
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক এই সভাপতি আরও বলেন, “একদিকে ব্যাংকের নিজস্ব অনিয়ম ও দুর্নীতি, অন্যদিকে অর্থনীতির সামগ্রিক দুরবস্থা—এই দুইয়ের কারণে ঋণগ্রহীতারা ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে দেশের আর্থিক খাত এখন ভয়াবহ অবস্থায় আছে।”
তিনি মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশে আয়ের, সামাজিক, সম্পদের ও রাজনৈতিক বৈষম্য—সব ধরনের বৈষম্য বাড়ছে। সরকারের কার্যক্রমেই এই বৈষম্য তৈরি হচ্ছে, যা আমাদের শনাক্ত করতে হবে।”
ভালো বাজেটের দাবিতে তিনি বলেন, “ভালো বাজেট মানে হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে সহায়তা, স্থানীয় শিল্প ও উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি, রপ্তানি সক্ষমতা বাড়ানো, জনগণের ক্রয়ক্ষমতা ও জীবনমান উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন।”
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ বাজেটে ‘বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন’-এ সাড়ে ১৬ শতাংশ বরাদ্দের সমালোচনা করে বলেন, “এই সময়টি কি বিল্ডিং নির্মাণে এত বড় বরাদ্দের উপযুক্ত? বরাদ্দ কমিয়ে সঠিক জায়গায় ব্যয় করাই কি উচিত ছিল না?”
তিনি বলেন, “সরকার কিছু খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করেছে, যেমন: সরকার পরিচালনা, জ্বালানি ও ব্যাংক খাত। এই উদ্যোগগুলোকে সংহত করা জরুরি।”
গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, “একদিকে প্রবৃদ্ধি, অন্যদিকে বেকারত্ব ও দরিদ্রের সংখ্যা বাড়ছে। এই অবস্থায় বাজেট বড় করলেই মানুষের প্রয়োজন মিটবে না।”
তিনি বলেন, “জনগণ বাজেট মানে বোঝে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। করব্যবস্থা মানুষের স্বস্তি দেয়নি। আয় নির্ধারণ করতে হবে ব্যয়ের ভিত্তিতে নয়, জনগণের সক্ষমতা বিবেচনায় রেখে।”
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “চলমান মূল্যস্ফীতির চাপ ও ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসের প্রেক্ষাপটে জনগণ চায় বাজেটে কিছুটা স্বস্তি থাকুক। বিনিয়োগ স্থবির, তাই বাজেটে তা চাঙা করার দিকেও নজর দেওয়া উচিত।”
আলোচনায় আরও অংশ নেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, বিকেএমইএর নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মাদ হাতেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন, অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ এবং ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ম. তামিম।
কাকরাইলের এইচআর ভবনের মিলনায়তনে এই গোলটেবিল অনুষ্ঠিত হয়।