পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতে অনির্দিষ্ট সংখ্যক যুদ্ধবিমান হারানোর কথা প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে ভারতের সামরিক বাহিনী। তবে মে মাসের শুরুতে চার দিনের এই সংঘাত কখনোই পারমাণবিক যুদ্ধের পর্যায়ে যায়নি বলে দাবি করেছে তারা।
সিঙ্গাপুরে শাংগ্রি-লা ডায়ালগে অংশ নিয়ে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান শনিবার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়া নয়, বরং কেন সেগুলো ভূপাতিত হয়েছে।”
৭ মে ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলো পাকিস্তান ও পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে বোমা বর্ষণ করে। নয়া দিল্লির দাবি, এসব হামলা চালানো হয় ‘সন্ত্রাসীদের অবকাঠামো’ লক্ষ্য করে। পাকিস্তান জানায়, তারা ভারতের ছয়টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে অন্তত তিনটি ছিল ফ্রান্সের তৈরি রাফাল।
তবে জেনারেল চৌহান পাকিস্তানের এই দাবি ‘পুরোপুরি ভুল’ বলে উড়িয়ে দেন। যদিও ভারত কতগুলো বিমান হারিয়েছে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
তিনি বলেন, “মূল বিষয় হচ্ছে, সেগুলো কেন ভূপাতিত হল, কী ভুল হয়েছিল—এই বিশ্লেষণই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ নয়।”
তার ভাষ্য, “ভালো দিক হচ্ছে, আমরা আমাদের কৌশলগত ভুলগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছি। সেগুলোর প্রতিকার করে, সংশোধন করে আমরা দুই দিন পর আবার অভিযান চালিয়েছি এবং সফলভাবে দূর পাল্লার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছি।”
৭ মে সংঘাত চলাকালে ভারতের যুদ্ধবিমানগুলোর অবস্থা নিয়ে এতদিন ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো বক্তব্য আসেনি। এই মন্তব্যগুলোকে সবচেয়ে খোলামেলা প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এর আগে মাসের শুরুতে নয়া দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় এয়ার অপারেশনের মহাপরিচালক এয়ার মার্শাল এ. কে. ভারতী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, “ক্ষয়ক্ষতি যুদ্ধেরই একটি অংশ।”
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ওই সময় দাবি করেন, তার দেশ ভারতের ছয়টি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। তবে এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। জেনারেল চৌহানের মন্তব্যের আগ পর্যন্ত ভারত সরকার এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
দুই দেশের মধ্যে এই সাম্প্রতিক সংঘাতকে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর বলে ধরা হচ্ছে। একে অপরের অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান, ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাশাপাশি সীমান্তে কামান ও হালকা অস্ত্রের গোলাবর্ষণও চলে।
২২ এপ্রিল ভারত শাসিত জম্মু ও কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর এই সংঘাতের সূত্রপাত হয়। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তান সমর্থিত সন্ত্রাসীদের দায়ী করে। তবে পাকিস্তান এই হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, তার দেশের মধ্যস্থতায় দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়, যার ফলে একটি ‘পারমাণবিক যুদ্ধ’ এড়ানো সম্ভব হয়েছে। এই মন্তব্যের বিষয়ে জেনারেল চৌহান কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও বলেন, দুই দেশ পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের খুব কাছে গিয়েছিল—এমন ধারণা ‘অবাস্তব’।