চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ, অটোরিকশা ঠেলে চললেন চালক

অটোরিকশা চালক মোহাম্মদ রফিক যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় এসে বিপাকে পড়েন জলাবদ্ধতার কারণে। পানিতে আটকে পড়ায় তার অটোরিকশার স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। অনেক চেষ্টাতেও স্টার্ট না নেওয়ায় পানি ঠেলে গাড়ি এগিয়ে নিতে হয় তাকে।

আরো দুরাবস্থা দেখা গেছে নগরীর চকবাজার এলাকায়। সেখানে কোমরসমান পানি জমায় এলাকার বাসিন্দা সাঈফ আদনান বলেন, “গত দুদিন এত বৃষ্টির পরও পানি না উঠায় একটু খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু আজ আবার আগের অবস্থা। পানি ডিঙিয়ে বের হওয়াই কঠিন।”

রোববার সকাল থেকেও মুষলধারে বৃষ্টি ঝরতে শুরু করে নগরীতে। সকাল ১০টার পর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। তবে বেলা দেড়টার দিকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামে।

টানা ভারি বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় দ্বিতীয় দিনের মত জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে পথে বের হওয়া নগরবাসীরা পড়েন ভোগান্তিতে, পানিতে আটকা পড়ে যানবাহনের চালকদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

সকাল থেকে নগরীর জিইসি মোড়, আগ্রাবাদের কিছু অংশ, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, মোহাম্মদপুর, গোয়াল পাড়া, এনায়েত বাজারসহ কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

তবে বেলা বাড়ার সাথে মূল সড়ক থেকে পানি নামতে শুরু করলেও, পাঁচলাইশ ও আগ্রাবাদ এবং কিছু এলাকার অলিগলিতে দুপুরের পরও পানি ছিল।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানিয়েছেন, এদিন বেলা ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “আজ এবং আগামীকাল এরকম ভারি বৃষ্টি হবে। অতি বৃষ্টিতে কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতা এবং পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।”

রোববার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে দিনের প্রথম জোয়ার শুরু হয়। এর আগেপরে মূলত নগরীর নিম্নাঞ্চল হিসেবে পরিচিত এলাকা এবং যেসব এলাকা দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে সেখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

এর আগে শনিবার রাতভর নগরীতে টানা বর্ষণ হয়, ফলে সন্ধ্যার পরও নগরীর জিইসি মোড়, ওয়াসা মোড় ও কাতালগঞ্জ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল। তবে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার টানা ভারি বৃষ্টিতেও বন্দর নগরীতে চিরাচরিত জলাবদ্ধতা তৈরি হয়নি।

আবহাওয়া কর্মকর্তা বলেন, “নিম্নচাপের প্রভাব এখনো কিছুটা আছে। সাথে সঞ্চালনশীল মেঘমালা এই অঞ্চলে আছে। এবং মৌসুমি বায়ুর প্রভাবও যোগ হয়েছে।”

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নগরীতে আগের ২৪ ঘণ্টায় মোট ৮২ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

তার আগে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নগরীতে ২২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়, যা ছিল এই মৌসুমে সর্বোচ্চ।

বন্দর নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সবচেয়ে বড় ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ৩৬টি খাল নিয়ে চলমান এই প্রকল্পের ভৌত কাজ পরিচালনা করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) চলতি বছরের শুরু থেকে খাল-নালা পরিষ্কারের কাজ শুরু করে। তবে এ খাতে বরাদ্দ স্বল্পতা এবং খাল পরিষ্কারের যন্ত্রপাতি কিনতে প্রস্তাবিত প্রকল্প অনুমোদন না হওয়ায় একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিটি মেয়র চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *