নিজের ছয় অ্যালবামের স্বত্ব ফিরে পেলেন টেইলর সুইফট

ছয় বছরের প্রচেষ্টার পর নিজের প্রথম ছয়টি অ্যালবামের স্বত্ব কিনে নিয়েছেন মার্কিন পপ তারকা টেইলর সুইফট।
৩৬ বছর বয়সী এই গায়িকা জানিয়েছেন, এক সময় যা তাঁর কাছে স্বপ্নের মতো ছিল, আজ তা বাস্তব হয়েছে।
তিনি বলেন, “বলতে পারেন, আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন সত্যি হল।”

সুইফটের এই দীর্ঘ লড়াইয়ের শুরু থেকেই ভক্তরা তাঁর পাশে ছিলেন। সে কথা স্মরণ করে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “আমি কৃতজ্ঞ, আপনারা আমাকে আমার সৃষ্টির সঙ্গে ফের মিলিয়ে দিয়েছেন। শুরু থেকে সঙ্গে ছিলেন আপনারা।”

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে নিজের প্রথম ছয়টি অ্যালবামের মাস্টার রেকর্ডিংয়ের মালিকানা ফিরে পেয়েছেন তিনি।
ওয়েবসাইটে দেওয়া এক লেখায় সুইফট জানান, “যেদিন জানতে পারলাম সত্যিই এটা ঘটছে, আনন্দে কেঁদে ফেলেছি। আমি আজ বলতে পারি, আমি যেসব গান লিখেছি, গেয়েছি, রেকর্ড করেছি, সব এখন আমার।”

তিনি বলেন, “যে শিল্পের জন্য আমি আমার জীবন উৎসর্গ করেছি, অথচ বলতে পারছিলাম না সেটি আমার নিজের। আমি প্রায় ভাবা বন্ধ করে দিয়েছিলাম যে এটি কখনও ঘটতে পারে। কিন্তু এখন সব অতীত।”

২০২০ সালে টেইলর সুইফটের অ্যালবামগুলো বিক্রি হয়েছিল ৩০০ মিলিয়ন ডলারে। পরে সংগীত পরিচালক স্কুটার ব্রন এই ক্যাটালগ বিক্রি করে দেন লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক প্রযোজনা সংস্থা শ্যামরক হোল্ডিংসকে।
বর্তমানে সেই শ্যামরকের কাছ থেকেই মালিকানা কিনেছেন সুইফট।

টাকার পরিমাণ প্রকাশ করা না হলেও জানা গেছে, প্রথম ছয় অ্যালবামের মালিকানা পেতে সুইফটকে খরচ করতে হয়েছে ৩৬০ মিলিয়ন ডলার।

ঘটনার সূত্রপাত ২০১৯ সালের জুনে। ওই সময় স্কুটার ব্রন সুইফটের সাবেক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বিগ মেশিন রেকর্ডস কিনে নেন।
ফলে ‘টেলর সুইফট’, ‘ফিয়ারলেস’, ‘স্পিক নাউ’, ‘রেড’, ‘১৯৮৯’ ও ‘রেপুটেশন’ অ্যালবামের স্বত্ব চলে যায় তাঁর হাতে।

এই ঘটনায় ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন সুইফট। তিনি জানিয়েছিলেন, এই ছয়টি অ্যালবামের জন্য তার হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল।
পরে তিনি ঘোষণা দেন, পুরোনো গানগুলো নতুন করে রেকর্ড করবেন। এই পুনঃরেকর্ড করা অ্যালবামগুলো ‘টেলরস ভার্সন’ নামে পরিচিতি পায়। এ পর্যন্ত চারটি অ্যালবাম নতুন করে রেকর্ড করেছেন তিনি।

সেই অ্যালবামগুলোতে সুইফট যুক্ত করেছেন কিছু নতুন গান ও পুরোনো অপ্রকাশিত ট্র্যাক।

গানের মূল রেকর্ডকৃত সংস্করণকে বলা হয় মাস্টার রেকর্ডিং। গানের মালিক নির্ধারণ করেন, গানটি কোথায় এবং কীভাবে ব্যবহৃত হবে—স্ট্রিমিং, সিডি, সিনেমা বা বিজ্ঞাপনসহ সব সিদ্ধান্ত তার হাতে থাকে।

সুইফট নিজেই তাঁর গান লেখেন। ফলে শুরু থেকেই প্রকাশনা অধিকার নিজের কাছে রেখেছিলেন।
১৪ বছর বয়সে বিগ মেশিনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। চুক্তির আওতায় মাস্টার রেকর্ডিংয়ের স্বত্ব প্রতিষ্ঠান নিজেদের কাছে রেখেছিল।

২০১৮ সালে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে তিনি চলে যান রিপাবলিক রেকর্ডসে।
২০১৯ সালে প্রযোজক স্কট বোরচেটা প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করে দেন স্কুটার ব্রনকে।
সুইফট জানিয়েছেন, গণমাধ্যম থেকেই তিনি ওই বিক্রির খবর পেয়েছিলেন।

তিনি বলেন, “আমার নিজের গানের স্বত্ব আমি কিনে নিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেই সুযোগ পাইনি।”
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমি চাই আমার গান বাঁচুক, সিনেমায় থাকুক, বিজ্ঞাপনেও বেজে যাক—তখনই, যখন আমি গানগুলোর মালিক।”

২০২৩-২৪ সালে সুইফটের সংগীত সফর ‘ইরাস ট্যুর’ থেকে কেবল টিকিট বিক্রি করেই আয় হয়েছে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
এ সম্পর্কে তিনি বলেন, “ইরাস ট্যুরের সাফল্য আমাকে নিজের গান ফিরে পেতে সাহায্য করেছে।”

ওয়েবসাইটে সুইফট লিখেছেন, নতুন শিল্পীরা যখন মাস্টার রেকর্ডিংয়ের অধিকার নিজেদের হাতে রাখে, তখন তিনি আনন্দ পান।
তিনি বলেন, “আমি বুঝতে পারি, আমার লড়াই কতটা সার্থক।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *