আপিল বিভাগের রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বহাল

আপিল বিভাগের রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বহাল থাকল বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম। তবে প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে আদালত কোনো পর্যবেক্ষণ দেননি।

প্রায় এক যুগ আগে হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেছিল। আজ রোববার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগ সেই রায় বাতিল করে।

তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ২০০৮ সালে ইসি জামায়াতকে নিবন্ধন দিয়েছিল। সেই নিবন্ধনকে হাইকোর্ট অবৈধ বলেছিল, কিন্তু আজ আপিল বিভাগ সে রায় বাতিল করায় নিবন্ধন বহাল রইল। তবে প্রতীকের বিষয়ে কিছু বলেনি আদালত।

রায়ে বলা হয়, জামায়াতের ক্ষেত্রে অনিষ্পন্ন রেজিস্ট্রেশন ইস্যু ও অন্য যেকোনো বিষয় থাকলে নির্বাচন কমিশনকে সাংবিধানিক ম্যান্ডেট প্রয়োগ করে তা নিষ্পত্তি করতে হবে।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের করা আপিল সর্বসম্মতভাবে মঞ্জুর করে আপিল বিভাগ। ১৪ মে শুনানি শেষে আজ রায় ঘোষণা করা হয়।

২০১৩ সালের ১ আগস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। আজকের রায়ে বলা হয়, সেই রায় ন্যায়সংগত হয়নি এবং তা বাতিল করা হলো।

২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, দাঁড়িপাল্লা প্রতীকটি কেবল সুপ্রিম কোর্টের মনোগ্রামে থাকবে এবং তা অন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক দলের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হবে না।

এরপর নির্বাচন কমিশন ২০১৭ সালে প্রতীক তালিকা সংশোধন করে দাঁড়িপাল্লা বাদ দেয়।

ফুল কোর্ট সিদ্ধান্ত বাতিলে জামায়াত ১২ মে আপিল বিভাগে আবেদন করে। পরে ১৪ মে তারা প্রতীক বরাদ্দ বিষয়ে ইসির প্রতি পর্যবেক্ষণ চেয়ে আবেদন করে।

রায়ে বলা হয়, সেই আবেদন প্রত্যাহার মঞ্জুর করা হলো, কোনো পর্যবেক্ষণ ছাড়াই।

আপিলকারীর আইনজীবী শিশির মনির জানান, আদালত নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক সংক্রান্ত বিষয় দ্রুত নিষ্পত্তি করতে।

২০০৮ সালে জামায়াতকে নিবন্ধন দেয় ইসি। ২০০৯ সালে ২৫ ব্যক্তি এই বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন।

২০১৩ সালে হাইকোর্ট রায় দিলে তা চ্যালেঞ্জ করে জামায়াত আপিল করে। আপিল বিভাগ তখন আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর ইসি ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে।

পরবর্তী সময়ে জামায়াত আবেদন পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে আপিল চালিয়ে যায়। ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর আপিল বিভাগ আবেদন গ্রহণ করে।

এ বছরের ৩ ডিসেম্বর আপিল শুনানি শুরু হয় এবং প্রতীকের বিষয়ে করা আবেদন ১২ মে একসঙ্গে শুনানির জন্য ট্যাগ করা হয়। আজ রায় দিয়ে আপিল বিভাগ জামায়াতের নিবন্ধন বৈধ রাখে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৪ সালের ১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিল। ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *