পদ্মা সেতু কমিয়েছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটের ভোগান্তি

পদ্মা সেতু চালুর আগে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার ছিল দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ। প্রতি ঈদেই সেখানে যাত্রী ও পরিবহন চালকদের ব্যাপক ভোগান্তি হতো। তবে এখন সেই চাপ বা দুর্ভোগ তেমন নেই।

ঘাট পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ জানায়, স্বাভাবিক সময়ে এ নৌপথ দিয়ে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার গাড়ি পারাপার হয়। ঈদের সময়ে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এজন্য ঈদের তিন দিন আগে ও পরে মোট ছয় দিন পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার বন্ধ থাকবে। তবে পশুবাহী ট্রাক অগ্রাধিকার পাবে।

যাত্রী ও যানবাহন পারাপারের জন্য ১৭টি ফেরি ও ২০টি লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সাতটি ঘাটের মধ্যে তিনটি প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজনে আরও একটি ঘাট যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন।

তিনি বলেন, “আশা করছি, বহরে থাকা ফেরি ও ঘাট দিয়ে ঈদে ঘরে ফেরা এবং ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা মানুষদের স্বস্তিতে পারাপার করাতে পারব।”

যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার। তিনি বলেন, “ফেরিঘাটে এসে কেউ যাতে হয়রানি বা চাঁদাবাজির শিকার না হয়, সেজন্য প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবে।”

ঈদের পাঁচ দিন আগে রোববার পাটুরিয়া ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, যানবাহন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কিছুটা বেশি। তবে কোনো গাড়িকে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে না।

কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী একটি বাসের যাত্রী মারুফ হোসেন বলেন, “তুলনামূলক যানজট কম। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে এই নৌপথে ভোগান্তি নেই বললেই চলে।” তবে ঈদের সময় যাত্রীরা অজ্ঞান পার্টি ও ছিনতাইকারীদের খপ্পরে পড়েন, এ বিষয়ে প্রশাসনের নজর প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তার পাশেই থাকা সবুজ শিকদার বলেন, “আমি নিয়মিত এই নৌপথ ব্যবহার করি। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে যানজট কমে গেছে। এখন ফেরি অপেক্ষা করে গাড়ির জন্য। স্বাভাবিকভাবেই চলাচল করতে পারছি।”

যশোর থেকে ট্রাক নিয়ে আসা চালক আব্দুল খালেক বলেন, “আমরা চাই সবসময় ফেরিঘাট ও মহাসড়ক পরিষ্কার থাকুক। এখন সেই ভোগান্তি নেই। পদ্মা সেতু চালুর আগে সাত দিনও বসে থেকেছি পারের অপেক্ষায়। এবার কোনো ভোগান্তি হবে না।”

ঝিনাইদহ থেকে আসা আরেক ট্রাক চালক বিল্লাল মোল্লা বলেন, “এবারও ঘাট পরিষ্কার থাকবে। কারণ, ঈদের আগে তিন দিন ট্রাক বন্ধ থাকবে। আর বেশিরভাগ গাড়ি পদ্মা সেতু দিয়ে যাচ্ছে, তাই যানজট হবে না।”

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবু রাসেল জানান, ঈদের সময় ঘাট এলাকায় অপরাধ প্রবণতা বাড়ে। অজ্ঞান পার্টি ও ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন অনেক যাত্রী। যাত্রীরা যেন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন, সে জন্য অন্যান্য জেলার পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ চলছে। র‌্যাব, সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যরাও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যুক্ত রয়েছেন বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *