২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। সোমবার বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালের পর কোনো বেতনকাঠামো না হওয়ায় বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।’
দীর্ঘদিন ধরে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা পূর্বে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘মহার্ঘ ভাতা অ্যাকটিভলি কনসিডার করা হচ্ছে। একটি কমিটি এ নিয়ে কাজ করছে। মহার্ঘ ভাতার সম্ভাবনা আছে, তবে কিছুটা সময় লাগবে।’ তবে বাজেট বক্তৃতায় তিনি ‘মহার্ঘ ভাতা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি এবং কখনোই এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলেননি।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তারা প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পেয়ে আসছেন। মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে কর্মচারীরা ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাচ্ছেন, যা এবারের বাজেটে আরও বাড়ানোর চিন্তা রয়েছে।
১০ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য প্রণোদনা ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ এবং প্রথম থেকে নবম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য বিদ্যমান ৫ শতাংশের সঙ্গে আরও ৫ শতাংশ যোগ করে মোট ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব বিবেচনায় রয়েছে।
২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে মহার্ঘ ভাতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এ বিষয়ে একটি কমিটি কাজ শুরু করে। পরবর্তী সময়ে সমালোচনার মুখে সরকার পেছালেও গত মাসে বিষয়টি আবার আলোচনায় আসে। কমিটি প্রথম থেকে নবম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য মূল বেতনের ১০–১৫ শতাংশ এবং ১০ থেকে ২০তম গ্রেডের জন্য ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা প্রস্তাব করে।
২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট সংক্ষিপ্তসার অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তাদের বেতনের জন্য ১৩ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা, কর্মচারীদের বেতনের জন্য ৩০ হাজার ৪৮ কোটি টাকা এবং ভাতা বাবদ ৪১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে বেতন-ভাতা খাতে বরাদ্দ ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা বেশি।
অর্থ উপদেষ্টা বাজেটে বিশেষ সুবিধার প্রস্তাব দেওয়ার পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, শেষ পর্যন্ত ‘মহার্ঘ ভাতা’ নামে কিছু না–ও থাকতে পারে। বর্তমানে দেওয়া বিশেষ প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি সুবিধা যোগ হতে পারে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের আশা, ঈদের পর এ বিষয়ে নির্দেশনা পাওয়া যাবে।
এদিকে মহার্ঘ ভাতা নিয়ে রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ১৮ জানুয়ারি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই সময়ে মহার্ঘ ভাতা দিলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।’ ২৭ মে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘এটা কি সরকারি কর্মকর্তাদের খুশি করতে করা হচ্ছে?’