চুরির অভিযোগে এক যুবককে রশি দিয়ে একটি পাকা খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখেছিলেন স্থানীয়রা। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাঁর চারপাশে ছিল উৎসুক মানুষের জটলা। তাঁকে মারধরও করা হচ্ছিল। পরে তিনি স্থানীয় ইউপি সদস্য ও মুরব্বিদের কাছে চুরির দায় স্বীকার করে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান। ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের সাধেরখলা গ্রামে রোববার এ ঘটনা ঘটে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই যুবকের নাম ইছা মিয়া (৩৫)। তিনি সাধেরখলা গ্রামের সায়েদ আলীর ছেলে ও ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
ভিডিওতে দেখা যায়, ইছা মিয়া খুঁটির সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় উপস্থিত লোকজনকে কাতরভাবে বলছেন, ‘আমার ঘরও মালটি আছে। মালটি আইন্যা দেই। আমারে একুট পানি খাওয়াও। তোমরা যা কও, আমি তা–ই রাজি। আমারে তোমরা আর মাইরো না, অত্যাচারটা কইরো না…।’ এ সময় কেউ তাঁর কাছে চুরি যাওয়া মুঠোফোনের সিম চাইছিলেন, আবার কেউ মসজিদের চুরি যাওয়া জিনিসপত্র সম্পর্কে জানতে চাইছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাধেরখলা হাজী এম এ জাহের উচ্চবিদ্যালয়–সংলগ্ন রহিম মিয়ার দোকানে শনিবার রাতে চুরির ঘটনা ঘটে। রোববার সকালে সন্দেহভাজন হিসেবে ইছা মিয়াকে ধরে আনেন গ্রামবাসী। তাঁকে দোকানঘরের খুঁটিতে বেঁধে মারধর করা হয়। তখন তিনি চুরির বিষয়টি স্বীকার করেন এবং কিছু মালামাল উদ্ধার করা হয়। পরে তাঁর পরিবারকে খবর দিলেও কেউ আসেননি। স্থানীয় ইউপি সদস্য রোপন মিয়াসহ কয়েকজন মুরব্বিকে ডেকে এনে মুচলেকা নিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
একই ইউনিয়নের আমতইল গ্রামের বাসিন্দা নুর আলম অভিযোগ করেন, তাঁর বাড়ি থেকেও ইছা মিয়া টাকা-পয়সা চুরি করেছেন। এলাকার অনেক বাড়িঘর ও মসজিদে চুরির সঙ্গে তিনি জড়িত বলে দাবি করেন।
দক্ষিণ বড়দল ইউপির সদস্য রোপন মিয়া জানান, ইছা মিয়ার বিরুদ্ধে আগে থেকেই চুরির অভিযোগ ছিল। রহিম মিয়ার দোকানে চুরির ঘটনায় তাঁকে ধরে এনে বেঁধে রাখা হয়। পরে তিনি মালামাল বের করে দেন এবং মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান।
ইছা মিয়ার সাংগঠনিক পরিচয় নিশ্চিত করতে দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলামকে ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুক মিয়া জানান, তিনি ২০২০ সালে পদত্যাগ করেছেন। বর্তমানে কমিটিতে কারা আছেন তা তাঁর জানা নেই।
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন জানান, তাঁকে কেউ বিষয়টি জানায়নি বা চুরির বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেনি। তবে চোর সন্দেহে কাউকে এভাবে শাস্তি দেওয়া আইনবিরোধী। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।