আওয়ামী লীগ না থাকলেও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে আগামী নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের কাছে অন্তর্ভুক্তির মানে হচ্ছে, প্রত্যেক বাংলাদেশি যেন মতামত প্রকাশের সুযোগ পায়।
বুধবার ঢাকায় ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ডিক্যাব টকে অংশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকলে নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন মানে হচ্ছে, সমাজের প্রত্যেক অংশ যেন ভোট দিতে পারে— নারী, ১৮ বছর বয়সী, নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়— অন্তর্ভুক্তিমূলক বলতে আমরা এটাই বোঝাই। তবে প্রত্যেকের নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রবেশাধিকার ও সক্ষমতা যেন থাকে।”
তখন এক সাংবাদিক জানতে চান, “তার মানে এটা কোনো রাজনৈতিক দলের বিষয় নয়?”
উত্তরে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক বলেন, “না।”
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি আওয়ামী লীগ বা বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে কোনো মন্তব্য করছি না। আমি বোঝাতে চাইছি, জাতিসংঘ রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নয়। এই প্রশ্ন করতে হবে সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে।”
ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান।
আন্দোলনে দমন-পীড়নের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শেখ হাসিনাসহ দলের অনেক নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনের মাধ্যমে দল হিসেবেও আওয়ামী লীগকে বিচারের মুখোমুখি করার বিধান রাখা হয়েছে। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির সব ধরনের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
সরকারের পদক্ষেপ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে। ফলে দীর্ঘদিন সরকারে থাকা দলটির নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।
গত বছরের জুলাই-অগাস্টে বাংলাদেশের সংঘাত নিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ না করার সুপারিশ করা হয়েছিল।
এই প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নে গোয়েন লুইস বলেন, “এই প্রশ্ন আমাকে নয়, সরকারের জন্য। আমরা সুপারিশ করেছি কারণ, সব দলের অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে মেরুকরণ এবং সম্ভাব্য সংঘাত এড়ানো যায়।”
“তবে আমি মনে করি, পারিপার্শ্বিক অবস্থার দিকে তাকাতে এবং দেশের প্রেক্ষাপটে সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকাতে হবে। এ বিষয়ে আমার এর বেশি কিছু বলার নেই। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, সরকারের সিদ্ধান্ত।”
অনুষ্ঠানে ডিক্যাব সভাপতি একেএম মঈনুদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুনও বক্তব্য দেন।