জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ‘বিএনপির প্রস্তাবের’ দিকে হেলে গেছেন বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি—এনসিপি।

দলটির রাজনৈতিক লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, কমিশনের ছয়টি প্রস্তাবের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা যেটির দিকে হেলে গেছেন, সেটি মূলত বিএনপির দেওয়া প্রস্তাব।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার বৈঠকে অংশ নেয় ৩০টি রাজনৈতিক দল।

দুপুরের খাবার বিরতিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির আদিব এবং গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।

আদিব বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে পদ্ধতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তাদের দল বাছাই করার পদ্ধতি নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলেছি। ঈদের আগে কমিশনের সভাপতি হিসেবে সরকারপ্রধানের বক্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছি। সংস্কার কমিশন ছয়টি প্রস্তাব দিয়েছিল, যার একটি ছিল সংসদ নির্বাচনের পর সাংবিধানিক সংস্কার।”

তিনি আরও বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ঈদের আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের যে তারিখ ঘোষণা করেন, সেখানে তিনি ঐ ছয়টি প্রস্তাবের মধ্যে বিএনপির দেওয়া একটি প্রস্তাবের দিকেই হেলে যান। এতে করে কমিশনের অবস্থান কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।”

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে দল নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন আদিব। তিনি বলেন, “আমরা জানতে চেয়েছি, দলগুলোকে কি কোনো নির্দিষ্ট দলের সুপারিশে ডাকা হয়েছে কি না। অনেক দল স্পষ্ট বক্তব্য না দিয়ে একটি দলের প্রতি হ্যাঁ-না বলায় সীমাবদ্ধ থাকে। বিপরীত মত আসলেই হট্টগোল শুরু হয়।”

আদিব বলেন, “আমরা বলেছি, কমিশন কোন পদ্ধতিতে এসব দল বাছাই করেছে, তা স্পষ্ট করতে হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শুধু রাজনৈতিক দল নয়, পেশাজীবী ও ছাত্রদের বড় অংশগ্রহণ ছিল, যাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব এখানে নেই। শুধুমাত্র রাজনৈতিক দল জনগণের ম্যান্ডেট বহন করে—এই ধারণা ভুল। অতীতে বহু দল একত্র হলেও সরকার পতন ঘটাতে পারেনি।”

তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের তিনটি মূল অংশীদার—রাজনৈতিক দল, জনতা ও শিক্ষার্থী। কিছু দলকে ডাকা হয়েছে, কিছু দলকে ডাকা হয়নি—কোন পদ্ধতিতে এটি হয়েছে, সেই ব্যাখ্যা আমরা চেয়েছি।”

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূর বলেন, “একটি বিশেষ দলকে প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ চালানোর অভিযোগ তুলেছে জামায়াতসহ কিছু দল। আমরাও বলেছি, রাজনৈতিক দলের বাইরেও গণআন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা অনেকের মতামত নেওয়া দরকার। সাংবাদিকসহ পেশাজীবী সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণও জরুরি। কোন দলকে কোন মানদণ্ডে বাছাই করা হয়েছে, সেটি আমরা জানি না।”

তিনি বলেন, “আজ যদি বলা হয় এতগুলো দল এতগুলো বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছে, তাহলে প্রশ্ন ওঠে—এই দলগুলোর যোগ্যতা বা মানদণ্ড কী?”