মৃত্যুপথযাত্রী রোগীদের চিকিৎসকের সহায়তায় স্বেচ্ছামৃত্যুর বৈধতা দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের অধিকাংশ সদস্য।
শুক্রবার হাউজ অব কমন্সে ‘টার্মিনালি ইল অ্যাডাল্টস (এন্ড অব লাইফ)’ শীর্ষক বিলটি ৩১৪-২৯১ ভোটে গৃহীত হয়েছে।
এখন বিলটি যাবে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ লর্ডস হাউজে। সেখানে অনুমোদন পেলে এটি আইনে পরিণত হতে আর কোনো বাধা থাকবে না। তবে উচ্চকক্ষে কোনো সংশোধনী আনা হলে তা ফের হাউজ অব কমন্সে ভোটের মুখে পড়বে।
নতুন এই বিল অনুযায়ী, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে যেসব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ছয় মাস বা তার কম সময় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, তারা চিকিৎসকের সহায়তায় নিজের জীবন শেষ করার সুযোগ পাবেন।
অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজ্যে এর আগে এ ধরনের স্বেচ্ছামৃত্যুর বৈধতা দেওয়া হয়েছে।
ভোটের আগে যুক্তরাজ্যের সরকার এ বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নেয়। ফলে এমপিরা দলীয় অবস্থানের বাইরে গিয়ে মত দিতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বিলটির পক্ষে ভোট দেন।
বিলটির সমর্থকদের মতে, এটি আইনে পরিণত হলে চরম শারীরিক যন্ত্রনায় থাকা মানুষদের মর্যাদাপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল বিদায়ের সুযোগ তৈরি হবে। তবে বিরোধীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এতে দুর্বল ও প্রভাবিত মানুষ চাপে পড়ে আত্মহত্যায় বাধ্য হতে পারেন।
ভোটের দিন শত শত মানুষ পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে জড়ো হন। ফলাফল ঘোষণার পর সমর্থকেরা করতালিতে উল্লাস প্রকাশ করেন এবং ‘ভিক্টরি!’, ‘উই ওন!’ বলে চিৎকার করেন। অপরদিকে বিরোধীরা হয়ে পড়েন নিস্তব্ধ।
মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত ৪২ বছর বয়সী এমা ব্রে জানান, তার আর ছয় মাসের বেশি সময় বাঁচার সম্ভাবনা নেই বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। এই সময়টাও তার কাছে খুব বেশি মনে হচ্ছে, তাই তিনি আগামী মাসে স্বেচ্ছায় খাওয়া বন্ধ করে মৃত্যুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এমার আশা, এই বিলটি আইনে পরিণত হলে ভবিষ্যতে তার মতো অনেক মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনবে।
জনমত জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ ব্রিটিশ নাগরিক চিকিৎসকের সহায়তায় স্বেচ্ছামৃত্যুর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে হাউজ অব কমন্সে বিলটি নীতিগতভাবে ৩৩০-২৭৫ ভোটে পাস হয়েছিল। পরে কমিটির পর্যালোচনা, সংশোধন ও বিতর্ক শেষে চূড়ান্তভাবে শুক্রবার তা ভোটে তোলা হয়।