চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে বিরোধিতাকারীদের ‘প্রতিহত’ করার ভাষা স্বৈরতান্ত্রিক: আনু মুহাম্মদ

চট্টগ্রাম বন্দরের একটি টার্মিনালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তরের বিরোধিতাকারীদের প্রতিহত করার আহ্বানকে ‘স্বৈরতন্ত্রের ভাষা’ বলে মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

শনিবার রাজধানীর পল্টন টাওয়ারের ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম মিলনায়তনে ‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা কেন ঝুঁকিপূর্ণ?’ শীর্ষক এক মুক্ত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

আনু মুহাম্মদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছিলেন, অথচ এখন বলছেন, যাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের প্রতিহত করতে হবে। এটা ঠিক স্বৈরতন্ত্রের ভাষা।

তিনি জানান, টার্মিনালটিতে বার্ষিক ১০ লাখ কনটেইনার ওঠানো-নামানোর ক্ষমতা থাকলেও দেশীয় অপারেটর গত বছর ১২ লাখ ৮১ হাজার কনটেইনার পরিচালনা করেছে। ১৭ বছর ধরে দেশীয় প্রতিষ্ঠান এই টার্মিনাল সফলভাবে পরিচালনা করে আসছে।

আনু মুহাম্মদ অভিযোগ করেন, প্রয়োজনীয় সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এই টার্মিনাল একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে আগের সরকারের আমলে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ডকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বন্দরকেন্দ্রিক শ্রমিক-কর্মচারীরা আন্দোলন করে আসছেন।

তিনি আরও বলেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে দায়িত্ব দেওয়ার বিরোধিতা জোরালো হবে। ইতোমধ্যে একটি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মঞ্চ গঠিত হয়েছে, যেখান থেকে ২৭ ও ২৮ জুন রোডমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করেন, আগের সরকারের সময়ও বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে ‘প্রশ্ন নেই, টেন্ডার নেই’—এই নীতিই চালু ছিল। এখন প্রধান উপদেষ্টার ক্ষেত্রেও একই কথা শোনা যাচ্ছে—তাঁর থাকার কারণে কিছু বলতে নেই। এমনকি মার্কিন রাষ্ট্রদূত বা বিশ্বব্যাংকের কথাও টেন্ডার ছাড়াই চুক্তির পক্ষে ব্যবহার করা হচ্ছে।

আনু মুহাম্মদ প্রশ্ন তোলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলছেন, এটা পৃথিবীর সেরা। তিনি বললেই তা মেনে নিতে হবে কেন? প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বিরোধিতাকারীদের প্রতিহত করার কথা বলাটা অগণতান্ত্রিক।”

তিনি বলেন, দায়িত্বশীল সরকার থাকলে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকে। কিন্তু দুর্বল সরকারগুলো কমিশনভোগীদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, সেখানে জবাবদিহির অভাব থাকে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন লেখক ও গবেষক মাহা মীর্জা, লেখক ও গবেষক কল্লোল মোস্তফা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লা বাহার।