ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ-নিন্দা

গতকাল শনিবার মধ্যরাতের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। এ হামলা শত্রু-মিত্র উভয় পক্ষকেই হতবাক করেছে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে।

এই পদক্ষেপের ফলে পুরো অঞ্চলে সংঘাত আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন দেশের বিশ্বনেতা ও কূটনীতিকরা হামলার নিন্দা জানিয়েছেন অথবা উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘ:
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, তিনি এ ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এটি উত্তেজনাপূর্ণ অঞ্চলে আরও বিপজ্জনক উত্তেজনা সৃষ্টির দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেন তিনি। গুতেরেস বলেন, ‘এই সংঘাত দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে; যা বেসামরিক মানুষ, এই অঞ্চল ও গোটা বিশ্বের জন্য ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।’

যুক্তরাজ্য:
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘ইরানকে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্র সেই হুমকি কমাতে পদক্ষেপ নিয়েছে।’ তিনি ইরানকে আলোচনায় ফিরতে এবং সংকটের কূটনৈতিক সমাধানের জন্য আহ্বান জানান।

অস্ট্রেলিয়া:
অস্ট্রেলিয়া সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’

নিউজিল্যান্ড:
নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সামরিক কর্মকাণ্ড অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ উত্তেজনা যেন না বাড়ে, তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।’

মেক্সিকো:
মেক্সিকো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব পক্ষকে কূটনৈতিক সংলাপে বসে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছাতে আহ্বান জানিয়েছে।

চিলি:
চিলির প্রেসিডেন্ট গাব্রিয়েল বোরিক বলেন, আন্তর্জাতিক আইনে এ হামলা অবৈধ। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই এবং শান্তি প্রয়োজন।’

ভেনেজুয়েলা:
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল এই হামলাকে অবৈধ, অযৌক্তিক এবং অত্যন্ত বিপজ্জনক আগ্রাসন বলে মন্তব্য করেছেন।

সৌদি আরব:
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, তারা ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ঘটনাটি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার বিষয়ে বিশেষভাবে নজর রাখা হচ্ছে। বিবৃতিতে উত্তেজনা কমাতে সংযম প্রদর্শন এবং রাজনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানানো হয়েছে।

ওমান:
ওমান, যারা ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছিল, এ হামলাকে অবৈধ আগ্রাসন বলে নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং সতর্ক করে বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ সংঘাত আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এটি আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

কাতার:
কাতার সতর্ক করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ফলে এ অঞ্চলে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

ইরাক:
ইরাক ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, এই হামলার ফলে সামরিক উত্তেজনা বেড়েছে, যা আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি।