সচিবালয়ে অধ্যাদেশবিরোধী কর্মসূচি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রবেশপথ অবরোধ

সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রবেশপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রোববার বেলা ১১টা থেকে সচিবালয়ের অলিগলিতে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন এবং পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান নেন।

সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতারা এ সময় একে একে বক্তব্য দেন। কর্মসূচি শেষে ঘোষণা দেওয়া হয়, সোমবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের লাইব্রেরি ও বাইরের এলাকায় দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করা হবে।

ফোরামের কো-চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, “সরকার আমাদের দাবি না মানলে সারাদেশে আন্দোলন জোরদার করা হবে। অধ্যাদেশ বাতিলের বিকল্প নেই।” তিনি অভিযোগ করেন, “সংশোধনের আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু আমাদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে না। আমরা কোনো সংশোধন মানি না, চাই পুরো অধ্যাদেশ বাতিল।”

অন্য কো-চেয়ারম্যান বাদিউল কবীর বলেন, “সচিবালয় কেপিআই এলাকা হওয়ায় মিছিল-মিটিং নিষিদ্ধ। তারপরও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছি। এখনই দাবি মানা হোক, আমরা কাজে ফিরতে চাই।”

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, সরকার নিজেই নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী কাজ করছে না। ২০২৮ সালের আইন অনুসারে কিছু সচিবকে অবসরে পাঠানো হয়েছে, যা বর্তমান অধ্যাদেশের ব্যত্যয় বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের মাধ্যমে কর্মকর্তারা ‘হয়রানির শিকার’ হতে পারেন এবং এটি পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদ সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের প্রস্তাবে সায় দেয় এবং ২৫ মে রাতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর অধ্যাদেশটি জারি করা হয়। তাতে পুরনো আইনে ‘৩৭ক’ ধারা সংযোজন করা হয়েছে, যা অনুযায়ী দুই দফায় সাত দিন করে নোটিশ দিয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

এই অধ্যাদেশকে আন্দোলনকারীরা ‘নিবর্তনমূলক কালো আইন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের দাবি, এটি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে না হলে আন্দোলন দেশের অন্যান্য সরকারি অফিসে ছড়িয়ে পড়বে।

সরকার ইতোমধ্যে এই পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আইন উপদেষ্টাকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করেছে, যা ইতোমধ্যে দুই দফা সভা করেছে।

অধ্যাদেশের দণ্ডসংক্রান্ত ধারায় উল্লেখ রয়েছে:

  • কোনো কর্মকর্তা অনানুগত্যমূলক আচরণ করলে বা অন্যকে উসকানি দিলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ।
  • সম্মিলিতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে কিংবা অন্যকে কর্মবিরতিতে বাধ্য করলে শাস্তি হতে পারে পদাবনতি, চাকরি থেকে অপসারণ বা বরখাস্ত।
  • অভিযোগের ভিত্তিতে দুই দফায় সাত দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর সুযোগ থাকলেও কর্তৃপক্ষ অপর্যাপ্ত জবাব পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।
  • দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাষ্ট্রপতির কাছে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।