ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ‘পুনর্বিন্যাসের’ পর্যায়ে, শীতল নয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে ভারতের যে সম্পর্ক ছিল, সেটির বদলে এখন সম্পর্ক ‘পুনর্বিন্যাসের’ পর্যায়ে থাকার কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তবে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক ‘শীতল’ নয় বলে মন্তব্য তার।

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, *”ভারতের সাথে সম্পর্ক শীতল আমি বলতে চাই না। আমি বলতেছি যে, এটা একটা রিঅ্যাডজাস্টমেন্টের (পুনর্বিন্যাস) পর্যায়ে আছে। আমরা এটাকে এভাবে দেখি। রিঅ্যাডজাস্টমেন্টের পর্যায়ে আছে এবং এ ব্যাপারে আমাদের স্বদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। এটুকু বলে আমি এখানে থামব।”

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, *”আমরা সত্যটাকে বরং স্বীকার করি যে, পূর্ববর্তী সরকারের সাথে ভারতের যে রকম ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, ভারত যে রকম সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছিল, আমাদের সাথে বর্তমান সম্পর্কটা ঠিক ওই রকম নাই। কাজেই এটাকে আমি রিঅ্যাডজাস্টমেন্ট বলছি।”

ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে এক ধরনের টানাপোড়েন চলছে। বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার পাশাপাশি দিল্লিতে বসে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রচেষ্টার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে এনেছে ইউনূস সরকার।

অপরদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ভারত সরকার। পাশাপাশি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও অপতথ্য’ এবং ‘অতিরঞ্জিত প্রচারণার’ অভিযোগ বাংলাদেশ সরকার করেছে।

বিভিন্ন বিষয়ে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি সীমান্ত ইস্যু এবং দিল্লি থেকে দেওয়া শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক তলবের ঘটনাও ঘটেছে।

কূটনৈতিক এ টানাপোড়নের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার ঘটনাও ঘটে। সবশেষ ১৭ মে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য আমদানি বন্ধের ঘোষণা দেয় ভারত।

রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কিংবা যোগাযোগ– কোন ধরনের সম্পর্ক পুনর্বিন্যাসের পর্যায়ে রয়েছে, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, *”সম্পর্কতো সবকিছু মিলিয়েই।”

মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, “মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সংঘাত নাই, কিছুই নাই একমাত্র রোহিঙ্গা সমস্যা ছাড়া। রোহিঙ্গা ইস্যুর একমাত্র সমাধান হচ্ছে, তাদের দেশে ফিরে যাওয়া, নিরাপদে থাকবে, স্বাভাবিক জীবন কাটাবে, সেখানে কেউ বাধা দেবে না, অত্যাচার অবিচার করবে না। এটুকু বিশ্ব সম্প্রদায় মোটাদাগে স্বীকার করে। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারছি না। এবং নানা চেষ্টা-তদবির চলছে। বাস্তবতাটি মেনে নিই যে, আমরা তাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে কিছু করতে পারিনি। আশা করি, আগামী দিনগুলোতে আমরা সেটা করতে পারব।”