সীমান্ত বিরোধ ঘিরে থাইল্যান্ডে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ, পায়েতংতার্নের পদত্যাগ দাবি

প্রতিবেশী ক্যাম্বোডিয়ার সঙ্গে এক সীমান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রার পদত্যাগ দাবি করে রাজধানী ব্যাংককে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন কয়েক হাজার মানুষ।
২০২৩ সালে ফ্যু থাই পার্টি ক্ষমতায় আসার পর থেকে এটি ব্যাংককে সরকারবিরোধী সবচেয়ে বড় সমাবেশ। শনিবার ব্যাংককে ভারি বৃষ্টি সত্ত্বেও সমাবেশে যোগ দেওয়া লোকজন প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্নের (৩৮) বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চালিয়ে যায়।

পায়েতংতার্ন একটি ভঙ্গুর জোট সরকার নিয়ে থাইল্যান্ডের নড়বড়ে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী মাসে তার সরকার পার্লামেন্টে এক সম্ভাব্য অনাস্থা ভোটের মুখে পড়তে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেতৃত্ব দেওয়া রাজনীতিক পার্ণথেপ পোপাংপান বলেন, “তাকে সরে যেতে হবে কারণ তিনিই সমস্যা।”

এই বিবাদের শুরু মে মাসে। ২৮ মে থাইল্যান্ড ও ক্যাম্বোডিয়ার সীমান্তের অচিহ্নিত একটি এলাকায় সংঘর্ষে এক ক্যাম্বোডীয় সেনা নিহত হওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।

এই পরিস্থিতির মধ্যেই ক্যাম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে পায়েতংতার্নের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। ফোনে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে হুন সেনের সঙ্গে পায়েতংতার্নের কথা হয়েছিল। ফোনালাপের সময় পারিবারিকভাবে পরিচিত হুন সেনকে ‘আঙ্কেল’ সম্বোধন করে তাকে ‘সহযোগিতা’ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন পায়েতংতার্ন।
সীমান্ত উত্তেজনার সময় থাই পক্ষের নেতৃত্ব দেওয়া সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে ফোনালাপে নেতিবাচক মন্তব্য করতেও শোনা গিয়েছিল পায়েতংতার্নকে। ফোনালাপে ওই সামরিক কমান্ডারকে বরখাস্ত করতে চাওয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি।

এসব কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। জনরোষ ছড়িয়ে পড়ার পর পায়েতংতার্নের ফ্যু থাই পার্টির ক্ষমতাসীন জোট সরকারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক দল ভূমজাইথাই পার্টি জোট থেকে বেরিয়ে যায়। এতে পার্লামেন্টে বড় ধাক্কা খায় পায়েতংতার্নের দল।

থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা এই দেশ একটি রেড লাইন অতিক্রমণের মতো।
ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর তার মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন পায়েতংতার্ন। কিন্তু পরিস্থিতি তার আওতার বাইরে চলে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

ব্যাংককের ভিক্টরি মনুমেন্ট এলাকার ব্যস্ত চৌরাস্তা বন্ধ করে কয়েক হাজার মানুষ বৃষ্টির মধ্যে ‘চলে যাও, চলে যাও’ বলে শ্লোগান দেয়। তাদের মধ্যে অনেক বয়স্ক নাগরিকও ছিলেন। তারা থাইল্যান্ডের জাতীয় তেরঙা পতাকা প্রদর্শন করেন।

প্রতিবাদের নেতা পার্ণথেপ বলেছেন, থাইল্যান্ডের জনগণ মনে করছে প্রধানমন্ত্রী ও তার প্রভাবশালী পিতা থাকসিন সিনাওয়াত্রা হুন সেনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছেন। সিনাওয়াত্রা পরিবারের সাবেক মিত্র হুন সেন এখন তাদের বিরুদ্ধে চলে গেছেন।