এনবিআরের সেবা ‘অত্যাবশ্যকীয়’ ঘোষণা করল সরকার

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে সংস্থাটির সেবাকে ‘অত্যাবশ্যকীয়’ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
রোববার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, “অতি জরুরি আমদানি-রপ্তানি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের কার্যক্রম চলমান রাখার জাতীয় স্বার্থে সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন সকল কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনসমূহের সকল শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেশের সব কর, ভ্যাট ও কাস্টমস দপ্তরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ করে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো রোববার ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি পালন করেন। এতে দেশের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়।

এর মধ্যে দুপুরে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, এদিন আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোনো বৈঠক হচ্ছে না। এর পরপরই সরকারের পক্ষ থেকে অত্যাবশ্যকীয় সেবার ঘোষণা আসে।

এর আগে, মে মাসে এনবিআরকে দুই ভাগ করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এ অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলম বিরতি সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন শুরু করেন।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন হবে। এরপর তাঁরা কাজে যোগ দিলেও এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন এবং তাঁকে অফিসে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন।

পরবর্তীতে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তায় এনবিআর চেয়ারম্যান অফিসে ফেরেন। যদিও তাঁর সঙ্গে কর্মকর্তাদের দূরত্ব রয়ে যায়।

আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ চেয়ারম্যান অপসারণের দাবিতে অবস্থান ও কলম বিরতি কর্মসূচি পালন করে। এরপর শনিবার থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু হয়, যার দ্বিতীয় দিনে সরকার কঠোর অবস্থানের কথা জানায়।

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশের বাজেট ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নমুখী কার্যক্রম পরিচালনার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো দুর্বল রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের রাজস্ব সংগ্রহ অনেক কম।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “এর মূল কারণ হলো আমাদের রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনার নানা দুর্বলতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি। এ প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার সকল অংশীজনের পরামর্শ অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

সরকার জানায়, “গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, রাজস্ব সংস্কার বাধাগ্রস্ত করতে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী গত দুই মাস ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি এবং রাজস্ব আদায় কার্যক্রম ব্যাহত করে আন্দোলনের নামে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি করছেন, যা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “সংস্কারের বিরোধিতা ছাড়াও অর্থ বছরের শেষ দুই মাসে তাঁরা রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছেন। এই তথাকথিত আন্দোলন পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক, যা জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক অধিকারের পরিপন্থি।”

সরকার জানায়, “রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি বিবেচনায় নেয়ার ঘোষণা এবং আলোচনার আহ্বান জানানো হলেও তাঁরা তা অগ্রাহ্য করেছেন। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান না করে তাঁরা আন্দোলনের নামে অনমনীয় অবস্থানে থেকে দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করে চলেছেন।”

বিবৃতিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবিলম্বে কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, সরকার আশা করে, তাঁরা আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসবেন।

“অন্যথায় দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।”