“উড়ে এসে জুড়ে বসিনি”—ইসি পুনর্গঠনের দাবিতে সিইসির জোরালো প্রতিক্রিয়া

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে একটি রাজনৈতিক দলের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন জোরালোভাবে বলেছেন, “আমরা জোর করে আসিনি, উড়ে এসেও জুড়ে বসিনি।” তিনি দাবি করেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায়।

মঙ্গলবার বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন সিইসি। তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর সাম্প্রতিক সৌজন্য সাক্ষাতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি।

সিইসি বলেন, “আমরা কেউ স্বৈরাচার সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত নই। গণ–অভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে এই নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। আইনি ও বাছাই প্রক্রিয়া মেনে আমরা নিয়োগ পেয়েছি। তাই পুনর্গঠন নিয়ে কোনো বার্তা কিংবা প্রশ্ন থাকার সুযোগ নেই।”

তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আলোচনা হয়েছে। তবে ভোটের তারিখ বা তফসিল নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট আলোচনা হয়নি। “প্রধান উপদেষ্টা শুধু জানতে চেয়েছেন আমাদের প্রস্তুতি কেমন। আমরা জানিয়েছি, নির্বাচনকে ঘিরে আমরা ফুল গিয়ারে প্রস্তুতি নিচ্ছি। নানান চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি,” বলেন নাসির উদ্দিন।

ভোটের সম্ভাব্য সময় নিয়ে তিনি বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে যেহেতু কখনো ফেব্রুয়ারি, আবার কখনো এপ্রিলের কথা এসেছে, আমরা সেই দুটি টাইমফ্রেম মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির ‘ইসি পুনর্গঠন হবেই’ মন্তব্য নিয়ে সিইসি বলেন, “রাজনৈতিক দলের বক্তব্য নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। রাজনৈতিক দল নানা রকম কথা বলতেই পারে। তবে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে আমাকে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি।”

আলোচনার সময়ে চারদিন অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, তিনি তখন অসুস্থ ছিলেন এবং সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে বিভিন্ন সংবাদ দেখে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করলাম। কেউ আমাকে পদত্যাগ করিয়ে দিয়েছে, কেউ বলেছে অসুস্থ হয়ে গেছি। এসব অনুমান বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সিইসি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা কখনো আমাদের কোনো দলকে ফেভার করতে বলেননি। তাঁর আন্তরিকতা আছে একটি নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে। আমরাও সে প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

সংবাদ সম্মেলনে সিইসি আরও বলেন, “স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো প্রস্তুতি নেই। আমরা জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। সরকার যদি স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন করতে চায়, আমাদের নির্বাচন উপকরণ ব্যবহার করতেই পারে। তবে আমাদের ফোকাস এখন জাতীয় নির্বাচন।”

একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনাকারী সাবেক দুই সিইসি—কে এম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়ালের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, “এটা বিচারাধীন বিষয়।”

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা দেখলে ইসির প্রতি আস্থা ফিরে আসবে। আমরা নিরপেক্ষ থেকে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”