রাজধানীর মহাখালীতে জাকারিয়া রেস্তোরাঁ ও বারে মদপানের জন্য ভিআইপি কক্ষ না দেওয়ায় ‘মনক্ষুণ্ণ’ যুবদল নেতার অনুসারীরা ভাঙচুর ও মদ-বিয়ার লুট করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় রেস্তোরাঁয় থাকা নারী অতিথিদের হেনস্তারও অভিযোগ রয়েছে।
হোটেল জাকারিয়া ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড কর্তৃপক্ষ সোমবারের এ ঘটনার ঘটনায় বুধবার বনানী থানায় মামলা করে। মামলায় বনানী থানা যুবদলের আহ্বায়ক মনির হোসেনসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়। আরও কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
বার ভাঙচুরের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যুবদল মনির হোসেনকে বহিষ্কার করে। বিজ্ঞপ্তিতে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
বনানী থানার ওসি রাসেল সারোয়ার জানান, এ ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন শায়ের তার ফেসবুক পোস্টে জাকারিয়া বারে ভাঙচুরের বর্ণনা দিয়ে কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ করেন। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই যুবদলের পক্ষ থেকে মনিরকে বহিষ্কারের ঘোষণা আসে।
যুবদলের সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভুঁইয়ার সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও দলের নীতি, আদর্শ ও সংহতি পরিপন্থী নানা অনাচারের কারণে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের আওতাধীন বনানী থানার আহ্বায়ক মনির হোসেনকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত নেতাদের কোনো ধরনের অপকর্মের দায়-দায়িত্ব দল নেবে না।”
বিজ্ঞপ্তিতে যুবদলের নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
এর আগে বুধবার রাতে এ ঘটনায় জাকারিয়া বারের কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক বাদী হয়ে বনানী থানায় মামলা করেন। এতে যুবদল নেতা মনির (৪২) ও তার সহযোগী লিটন (৩০), হাসান (৩৫), সামু (৩২) ও জহিরের (৩০) নাম উল্লেখ করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৩০ জুন রাত ৮টার দিকে জাকারিয়া বারে আসেন মনির হোসেন। তিনি একটি ভিআইপি কক্ষ চান। কিন্তু কক্ষ খালি না থাকায় দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে টেবিলে বসে খাবার ও মদ অর্ডার করেন। খাবার শেষে বিলে ছাড় চাইলে কিছুটা কমিয়ে দেওয়া হয়। তবে যাওয়ার সময় ভিআইপি কক্ষ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যান।
পরদিন রাত পৌনে ৯টার দিকে ২০-২৫ জনের একটি দল জোর করে বার ও রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়ে। ঢোকার পর মনিরের সহযোগী লিটন একটি গ্লাস মেঝেতে ছুঁড়ে মারেন এবং বলেন, “মনির ভাইকে ভিআইপি কক্ষ না দিয়ে অসম্মান করেছিস, আমরা মনির ভাইয়ের লোক, চিনে রাখবি।”
এরপর তারা হোটেলে ভাঙচুর চালায়। হোটেলের অফিস রুম ও ক্যাশ কাউন্টার থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকা এবং আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার মদ ও বিয়ার লুট করে নিয়ে যায়। বাধা দিতে গেলে বারের কর্মীদের মারধরও করা হয়।
সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা হামলার ভিডিওগুলো বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে প্রকাশ করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, মেটাল ডিটেক্টর আর্চওয়ে ভেঙে ঢুকে পড়েন একদল ব্যক্তি। তাদের জিনিসপত্র মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলতে এবং কর্মীদের টানা-হেঁচড়া করতে দেখা যায়। নারীদেরও হেনস্তা করা হয়। সিঁড়ির কাছে একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তারা সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকা এক নারীকে ঘিরে ধরে হেনস্তা করছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মনির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।