গণমাধ্যমের চাপ সহ্য করতে না পেরে নির্যাতিত নারী বাড়ি ছাড়লেন, পুলিশ বলছে ‘ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত’

কুমিল্লার মুরাদনগরে পাশবিক নির্যাতনের শিকার সেই নারী গণমাধ্যমের চাপ ও জনসমাগমে অতিষ্ঠ হয়ে বাবার বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে ওই নারী, তাঁর মা–বাবা ও পরিবারের সদস্যদের আর বাড়িতে পাওয়া যায়নি।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকে প্রতিদিনই ওই নারীর বাড়িতে সাংবাদিক, ইউটিউবার ও সাধারণ মানুষের ভিড় বাড়ছিল। বারবার সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তাঁর পারিবারিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ ভিডিওতে তাঁর মুখও প্রকাশ করছেন, যা তাঁকে আরও বিপদে ফেলছে। এসব বিব্রতকর পরিস্থিতির কারণে তিনি স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে গেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেলে পুলিশের সহযোগিতায় নির্যাতনের শিকার ওই নারী তাঁর দুই সন্তান নিয়ে স্বামীর বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। পরে তাঁর মা–বাবাসহ পরিবারের অন্যরাও অন্যত্র চলে যান। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ওই বাড়িতে গেলে আশপাশে ভিড় করেন হাজারো মানুষ। তবে আগেই বাড়ি ছাড়ায় ভুক্তভোগীকে সেখানে পাওয়া যায়নি।

কুমিল্লা জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বাড়িতে আসা লোকজন ও ইউটিউবারদের কারণে তাঁর জীবনযাপন দুঃসহ হয়ে উঠেছিল। তিনি পুলিশের সহায়তা চাওয়ায় আমরা তাঁকে সাহায্য করেছি।”

মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, “শুনেছি ওই নারী তাঁর শ্বশুরবাড়ি বা কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে গেছেন। বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে তাঁর ব্যক্তিগত।”

গত ২৬ জুন রাতে ফজর আলী নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওই নারীকে ধর্ষণ এবং পরে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী। পরে পুলিশ ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করে।

এ ঘটনায় পর্নোগ্রাফি ও নারী নির্যাতন আইনে করা মামলায় চার যুবক—সুমন, রমজান, আরিফ ও অনিক—কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছে পুলিশ। শুনানির তারিখ ধরা হয়েছে আগামী বৃহস্পতিবার।

ওসি জাহিদুর রহমান জানান, ওই চারজনের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। সেগুলো ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডির ল্যাবে পাঠানো হবে, যাতে জানা যায় ভিডিওটি প্রথম কোথা থেকে ছড়ানো হয়েছে।

নতুন করে কাউকে গ্রেপ্তার না করা গেলেও পুলিশ জানিয়েছে, বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।