পুলিশ বাহিনী সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ।
পটিয়া থানা এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে বুধবার দিনভর বিক্ষোভের পর বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহরে সংবাদ সম্মেলনে নতুন এ আন্দোলনের ডাক দেন তিন সংগঠনের নেতারা। এ দাবিতে তারা সন্ধ্যায় বিক্ষোভ মিছিলও করেন।
মঙ্গলবার রাতে পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটার প্রতিবাদ জানাতেই সংবাদ সম্মেলন হয়।
জুলাই আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের অন্যতম সমন্বয়ক এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, “এদেশে আবারও জুলাই নেমে আসবে, বীর চট্টলা আবারও ঐক্যবদ্ধ হবে। বাংলাদেশ আবারও ঐক্যবদ্ধ হবে। ৫ অগাস্টের মত বাংলাদেশের মানুষ আবারও রাজপথে নেমে আসবে। তারা পুলিশের সংস্কার চাইবে, তাদের ভাইদের খুনিদের বিচার চাইবে। যে মা সন্তান হারিয়েছেন, তিনি তার সন্তান হত্যার বিচার চাইবেন।”
পটিয়া থানার ওসির অপসারণ নিয়ে প্রশাসন ‘প্রহসন’ করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, পটিয়ার ওসিকে স্থায়ীভাবে অপসারণপূর্বক বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।”
তিনি বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ সংস্কার কাজ শুরু না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।”
এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক জুবাইর হাসান বলেন, তারা চার দফা দাবি জানিয়েছিলেন—পটিয়া থানা থেকে সদ্য প্রত্যাহার হওয়া ওসিকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও বিচার এবং নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপারকে অপসারণ করা, পুলিশ বাহিনীতে সংস্কারের নির্দেশনা দেওয়া এবং কাউকে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগ হিসেবে চিহ্নিত করে থানায় সোপর্দ করার পর পুলিশ যদি তাকে গ্রেপ্তার না করে, তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যাতে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, “এ দাবিগুলোর মধ্যে আংশিক কিছু আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা প্রহসনের মত এক ধরনের প্রমোশনের ব্যবস্থা করেছে ওসিকে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “পুলিশ ছাত্রলীগের স্টেকহোল্ডার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমরা যখন পটিয়া থানায় ছাত্রলীগকে ধরিয়ে দিতে চাই, তখন পটিয়া থানা আমাদের মব বলে টর্চার চালায়। আমাদের ভাইদের আহত করে। অনেক ভাই হাসপাতালে কাতরাচ্ছে।”
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পটিয়া শহীদ মিনার এলাকা থেকে রাঙামাটির একজন ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করে থানায় নিয়ে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। থানায় গিয়ে তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর দাবি করলে উত্তেজনা তৈরি হয়। এ সময় পুলিশের লাঠিপেটায় বেশ কয়েকজন আহত হন।
পরে বুধবার সকালে পটিয়া থানা ঘেরাও এবং বাইপাস এলাকায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। বিকালে নগরীর খুলশী ৪ নম্বর সড়কে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা।
ডিআইজি কার্যালয়ে না আসায় বিক্ষোভকারীরা সড়ক অবরোধ করেন। পরে সন্ধ্যায় ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ সড়কে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বললে তারা সড়ক ছাড়েন।
রাতে পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূরকে প্রত্যাহার করে রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করার আদেশ দেওয়া হয়।