সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে ‘অদক্ষ ও ব্যর্থ’ দাবি করে তাঁকে অপসারণের দাবিতে রাজপথে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় এ কর্মসূচি শুরু হয়। আরিফুল হক এই কর্মসূচিকে শ্রমিক, মালিক ও ব্যবসায়ীদের অধিকার আদায়ের কর্মসূচি হিসেবে ঘোষণা দেন। কর্মসূচিতে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ছাড়াও পরিবহন শ্রমিকনেতারা অংশ নেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় আরিফুল হক প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ নিয়ে কোর্ট পয়েন্ট এলাকার ফুটপাত ও রাস্তার একাংশে অবস্থান নেন। কর্মসূচির মূল অংশ শুরু হয় বেলা সাড়ে ১১টায়। এ সময় সমাবেশ সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন আহমদ মাসুক।
বেলা ১টার দিকে সমাবেশ শেষ হয়। এতে বক্তব্য দেন আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক সহসম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাদিকুর রহমান, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।
সমাবেশ থেকে পরিবহনমালিক ও শ্রমিক নেতারা দাবি করেন, আগামী শুক্রবারের মধ্যে সিলেটের ডিসিকে অপসারণ না করা হলে শনিবার থেকে সিলেটের সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
বক্তব্যে আরিফুল হক চৌধুরী অভিযোগ করেন, জেলা প্রশাসক কোনো নোটিশ ছাড়া বৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে পাথরভাঙা যন্ত্র (ক্রাশার মেশিন) ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। নগরের মেজরটিলা এলাকায় নোটিশ ছাড়াই বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নষ্ট করছে বলে দাবি করেন তিনি।
আরিফুল বলেন, “ডিসি পাথর–সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে আজ সভা ডাকলেও কোনো ব্যবসায়ী বা শ্রমিক নেতা সেখানে যাননি। নির্যাতনের পর এখন ডাকছেন—এই বৈঠক ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।”
তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ৪ জুলাইয়ের মধ্যে ডিসিকে প্রত্যাহার না করা হলে আরও কঠোর আন্দোলনে যাওয়া হবে।
স্থানীয় বিএনপির একটি সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আরিফুল হকের কিছু বিষয়ে মনোমালিন্য রয়েছে। পাথরকোয়ারি ইজারা চালু এবং উচ্ছেদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী-শ্রমিকদের আন্দোলনের সুযোগে তিনি ‘ডিসি হটাও’ কর্মসূচি চালাচ্ছেন।
তবে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, “এই কর্মসূচি আরিফুল হকের ব্যক্তিগত উদ্যোগ, এতে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে সিলেটে অস্থিরতা রয়েছে।”
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সিলেটের পাথরকোয়ারিগুলো ইজারা দিয়ে এবং ক্রাশার মেশিনে বিদ্যুৎ সংযোগ চালুর দাবিতে পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও পরিবহন বন্ধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।
বুধবার দুপুর ১২টায় এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে জেলা প্রশাসক একটি বৈঠকে বসেন, যেখানে জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং জামায়াতের নেতাসহ পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় পাথরভাঙার যন্ত্রের বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। এছাড়া সড়ক প্রশস্তকরণের অংশ হিসেবে সওজ তাদের জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করছে। সরকারি কর্মকর্তারা দায়িত্ব অনুযায়ী কাজ করছেন। হঠাৎ করে আমার অপসারণ চেয়ে কর্মসূচি দুঃখজনক।”