আদালত অবমাননায় শেখ হাসিনার ৬ মাসের কারাদণ্ড

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালত অবমাননার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই মামলায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বুধবার এই রায় ঘোষণা করে। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

ক্ষমতা ছাড়ার পর ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এটি প্রথম সাজা। আদালত অবমাননার এই মামলাটি উঠে আসে শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুলের কথিত টেলি আলাপের একটি অডিও ভাইরাল হওয়ার পর। সেই অডিওতে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, “আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি।”

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ফরেনসিক বিশ্লেষণ করে জানায়, অডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি নয় এবং তা আসল। এরপর গত ৩০ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগ গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল ১৫ মে’র মধ্যে জবাব দিতে বলেন, তবে কোনো জবাব না আসায় ২৫ মে তাদের হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়।

পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও শেখ হাসিনা হাজির হননি এবং কোনো আইনজীবীর মাধ্যমেও ব্যাখ্যা দেননি। এ অবস্থায় ট্রাইব্যুনাল ন্যায়বিচারের স্বার্থে তার পক্ষে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেয়। ১৯ জুন অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ পান এ ওয়াই মশিউজ্জামান।

শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল রায় দেয়। প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী অডিওটি শেখ হাসিনা ও শাকিল আকন্দ বুলবুলের। এতে বিচার প্রক্রিয়ায় যুক্ত ব্যক্তিদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩-এর ১১(৪) ধারা অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার দায়ে সাজা দেওয়া হয়।

রায়ে বলা হয়, তারা যেদিন আত্মসমর্পণ করবেন বা গ্রেপ্তার হবেন, সেদিন থেকে সাজা কার্যকর হবে।

২০১০ সালে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়। এ পর্যন্ত তিনটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।

গত জুলাইয়ের অভ্যুত্থান দমন ও মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। একইসঙ্গে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার শুরুর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করা হয়েছে এবং দলের সকল কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।