ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসির ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ সুপারিশ সরকারের কাছে

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারের কাছে সংস্কার কমিশনের ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ প্রস্তাব পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

মার্চের মাঝামাঝি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুরোধে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মধ্য থেকে জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলো নির্ধারিত ছকে পাঠানো হয়।

বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক সচিবের কাছে এসব প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। সেখানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় নতুন সংযোজনসহ বেশ কিছু প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

এ প্রস্তাবনার মাধ্যমে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থা’র সংজ্ঞায় পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি, কোস্ট গার্ডের পাশাপাশি ‘প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগসমূহ’ যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এই সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ যুক্ত হলে নির্বাচনে সশস্ত্রবাহিনীকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অংশ হিসেবে মোতায়েনের পথ সুগম হবে। সরকারের অনুমোদন পেলে ১৫ বছর পর আরপিওতে এ ধরনের সংস্কার আসবে।

সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ জানান, প্রস্তাবনায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্রবাহিনীকে যুক্ত করার বিষয়টি রয়েছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২০০১ সালের আগে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন সংক্রান্ত কোনো বিধান আরপিওতে না থাকলেও ১৯৭৩ সাল থেকে সব জাতীয় নির্বাচনে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন।

২০০১ সালে এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে আরপিওতে ‘ল এনফোর্সিং এজেন্সি’র সংজ্ঞায় ‘ডিফেন্স সার্ভিস’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে ২০০৯ সালে তা বাদ দেওয়া হয়।

সেই সময়ে আরপিওতে প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ অন্তর্ভুক্ত থাকায় নবম সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কিছু এলাকায় সেনা ও নৌবাহিনী মোতায়েন করা হলেও ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সংশোধিত আইনে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

গত তিনটি নির্বাচন কমিশন আরপিও সংস্কারে উদ্যোগ নিলেও ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থা’র সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ যুক্ত করার সুপারিশ করেনি।

তবে বর্তমান কমিশনের আগে গঠিত বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সশস্ত্রবাহিনীকে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করেছিল। এবার বর্তমান এ এম এম নাসির উদ্দিন কমিশন নতুন করে একই সুপারিশ করেছে।

‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ সুপারিশগুলোর মধ্যে নির্বাচন কমিশন, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের নয়টি বিষয় রয়েছে।

এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে—

  • গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (সংশোধন)
  • নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ (সংশোধন)
  • নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ (সংশোধন)
  • নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও গণমাধ্যম নীতিমালা (স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক)
  • পর্যবেক্ষণ ও সাংবাদিক নীতিমালা (সংশোধন)
  • রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ (সংশোধন)
  • হলফনামার খসড়া
  • ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ (অভ্যন্তরীণ ও প্রবাসী)
  • পোস্টাল ব্যালট পরীক্ষা-নিরীক্ষা
  • আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন (সংশোধন)
  • রাজনৈতিক ও নির্বাচনি অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতকরণ।

সরকারের কাছে পাঠানো চিঠিতে এসব সংস্কার সুপারিশের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের মতামতও তুলে ধরা হয়েছে।