গোপালগঞ্জে বার বার মাইকে ঘোষণা দিয়েও হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে না পেরে সেনাবাহিনী ‘আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়’ বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর জানায়, জেলার সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন ‘স্বাভাবিক’ এবং গুজব বা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গোপালগঞ্জ জেলায় একটি রাজনৈতিক দলের জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে আহ্বানকৃত জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে এলাকার একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা ১৬ জুলাই সংঘবদ্ধভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। এ ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিক আহত হন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সরকারি যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।”
পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হওয়ায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে হস্তক্ষেপ করে প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “সমাবেশ চলাকালীন মঞ্চে পুনরায় হামলা এবং একই সাথে জেলা কারাগারে ভাঙচুর করা হয়। মাইকে বারবার ঘোষণা দিয়েও হামলাকারীদের থামানো সম্ভব হয়নি। তারা সেনাবাহিনীর উপর ককটেল ও ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে, ফলে সেনাবাহিনী আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়।”
পরে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ যৌথভাবে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে খুলনায় স্থানান্তর করা হয়।
আইএসপিআর জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পেশাদারিত্ব ও ধৈর্যের সঙ্গে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। কোন দলের কর্মসূচিতে কারা হামলা চালিয়েছিল, সে বিষয়ে কোনো নাম উল্লেখ করা হয়নি এবং হতাহতের তথ্যও দেওয়া হয়নি।
জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে বুধবার এনসিপির সমাবেশ ঘিরে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মীদের হামলা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে গোপালগঞ্জ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। টানা পাঁচ ঘণ্টার ওই সংঘাতে অন্তত চারজন নিহত হন। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আটকা পড়া এনসিপি নেতাদের পরে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানে সরিয়ে নেওয়া হয়।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নিলে পরিস্থিতি এতটা ভয়ঙ্কর হতো না।
সহিংসতার পর বুধবার রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়, যা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হবে।
আইএসপিআর বলেছে, “বর্তমানে গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং কারফিউ চলমান। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও প্রশাসনের অন্যান্য সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করছে। জনসাধারণ ধৈর্য ধরে সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করেছেন। গুজব বা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব ও জননিরাপত্তায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”