পাকিস্তান থেকে সব পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করল ভারত

পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তান থেকে সব ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও জননীতির স্বার্থে’ এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে দেশটির সরকার।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শুক্রবারের এক আদেশে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে উৎপাদিত বা সেখান থেকে রপ্তানির সব ধরনের পণ্যের প্রবেশ বন্ধ থাকবে। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। আদেশে আরও বলা হয়, এই নিষেধাজ্ঞার ব্যতিক্রমের ক্ষেত্রে ভারত সরকারের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।

গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। ওই হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার একমাত্র বাণিজ্য পথ ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়।

পাকিস্তান থেকে মূলত ওষুধজাত পণ্য, ফল ও তেলবীজ আমদানি করে থাকে ভারত। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর পাকিস্তানি পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল ভারত। এরপর থেকে আমদানি হ্রাস পেতে থাকে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে ভারতের আমদানির পরিমাণ ছিল মোট আমদানির মাত্র ০.০০০১ শতাংশ।

পেহেলগাম হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করছে দিল্লি। তবে পাকিস্তান বলছে, ওই অভিযোগের কোনো প্রমাণ ভারত দিতে পারেনি।

ভারত ইতোমধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে, পাকিস্তানিদের দেওয়া ভিসা বাতিল করেছে এবং ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত বন্ধ করেছে।

জবাবে পাকিস্তান সরকার ভারতের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে শিমলা চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়েছে। সাধারণ ভারতীয়দের জন্য ভিসা বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি সীমান্তের প্রধান প্রবেশপথও বন্ধ করে দিয়েছে।

দুই দেশই নিজেদের আকাশে অন্য দেশের উড়োজাহাজ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখায় দুই দেশের সেনাদের গোলাগুলির খবরও প্রকাশ পেয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন এলাকায় পূর্ণমাত্রার সামরিক মহড়া চালায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। তার পরদিনই পাকিস্তান থেকে সব ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে ভারত।

পাকিস্তান সরকার জানিয়েছে, ভারত আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সামরিক হামলা চালাতে পারে বলে তাদের কাছে ‘নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য’ রয়েছে। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার ও বুধবার তার নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের নিয়ে টানা বৈঠক করেছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী যাতে প্রয়োজনে হামলা চালাতে পারে, সেজন্য তিনি ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে নতুন করে যুদ্ধের শঙ্কা দেখা দেওয়ায় পুরো ভারতীয় উপমহাদেশে অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *