আটকের ১২ ঘণ্টা পর সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৬ জন কারাগারে

ঢাকার শাহবাগ থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৬ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। শুক্রবার ঢাকার মহানগর হাকিম সারাহ্ ফারজানা হক তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি শেষে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বৃহস্পতিবার দিনে আটকের ১২ ঘণ্টারও পর রাত পৌনে একটার দিকে এই ১৬ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাজধানীর শাহবাগ থানার উপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে এই মামলা করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই তৌফিক হাসান আসামিদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেছিলেন। প্রসিকিউশন পুলিশের এসআই জিন্নাত আলী গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, সাংবাদিক মনজুরুল ইসলাম পান্না, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা ও আরও কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী।

রেপ্তার অন্যরা হলেন- আব্দুল্লাহ আল আমিন, কাজী এটিএম আনিসুর রহমান, মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম , মো. জাকির হোসেন, তৌসিফুল বারী খান, আমির হোসেন ওরফে সুমন, নাজমুল আহসান, মো. আল-আমিন, সৈয়দ শাহেদ হাসান, শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, দেওয়ান মো. আলী ও আব্দুল্লাহিল কাইয়ুম।

ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক থেকে। মঞ্চ ৭১ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। বৈঠকের শুরুতেই একদল তরুণ হট্টগোল শুরু করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে অতিথিদের নিরাপত্তার কথা বলে পুলিশ সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীসহ কয়েকজনকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।

ডিআরইউ থেকে আটক করার পর পুলিশ জানায়, নিরাপত্তাজনিত কারণে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে এবং গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকার কথা ছিল বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের। তবে তিনি সেখানে ছিলেন না। সকাল ১০টায় গোলটেবিল আলোচনা শুরুর কথা থাকলেও বেলা ১১টায় আলোচনা সভাটি শুরু হয়।

আলোচনা সভায় প্রথমে বক্তব্য দেন শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশের সংবিধানকে ছুড়ে ফেলার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে জামায়াত-শিবির ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের জুতার মালা পরাচ্ছে।’

হাফিজুর কার্জনের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই মিছিল নিয়ে একদল লোক ডিআরইউ মিলনায়তনে ঢোকেন। তারা ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘জুলাইয়ের যোদ্ধারা, এক হও লড়াই করো’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় আহত হন মুক্তিযোদ্ধা কেশব রঞ্জন সরকার ও জাসদ নেতা আব্দুল্লাহিল কাইয়ুম।

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশের (ডিএমপি) একটি দল এলে ওই ‘মবকারীরা’ পুলিশের কাছে লতিফ সিদ্দিকী, শেখ হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ অন্তত ১৬ জনকে তুলে দেন।

পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আসাদুজ্জামান সেখানে উপস্থিত ছিলেন। দুপুর সোয়া ১২টার পর কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসে লতিফ সিদ্দিকীসহ বেশ কয়েকজনকে পুলিশ ভ্যানে নিয়ে যান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমরা আলোচনা শুরু করার পর হঠাৎ ২০-২৫ জন তরুণ এসে হট্টগোল করে ঘিরে ফেলে। এরপর পুলিশ সবাইকে নিয়ে যায়।’

গোলটেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আল আমিন রাসেল নামের একজন বলেন, ‘আমরা জুলাই যোদ্ধা। এখানে পতিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে ষড়যন্ত্র করছে। জুলাই যোদ্ধারা বেঁচে থাকতে এমন কিছু আমরা মেনে নেব না।’

ঢাকায় কর্মরত রিপোর্টারদের সংগঠন ডিআরইউ জানিয়েছে তাদের কমিটির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন এবং অন্য জ্যেষ্ঠ সদস্যরা ওই ‘মবকারীদের’ নিবৃত্ত করতে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়।
আলোচনা সভা ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় গতকাল নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ডিআরইউ। সংগঠনটি বলছে গত বছর জুলাই আন্দোলনের সময়ও রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রাঙ্গনে সবার কথা বলার সুযোগ ছিলো।