রাকসু নির্বাচন: প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগেই প্রচারণার মাঠে সবাই

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ — রাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন। নিয়ম বলছে, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরেই শুরু হবে রাকসুর নির্বাচনী প্রচারণা। অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটা ১৪ সেপ্টেম্বর স্পর্শ করেলেই প্রচারণায় নামতে পারবেন প্রার্থীরা। অথচ তার আগেই আচরণবিধির বাঁধন উপেক্ষা করে প্রায় সব প্রার্থী নেমে পড়েছেন প্রচারের মাঠে।

রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট-এ ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন ২০২৫, আচরণবিধি ধারা ৪(খ) এ বলা হয়েছে, ‘প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার দিন থেকে ভোট গ্রহণের শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা করতে যাবে। প্রচারণার সময় সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র আর সরেজমিনে ঘুরে চোখে পড়ে ভিন্ন এক দৃশ্য। আচরণবিধির বাঁধন গলে আগেভাগেই শুরু হয়ে গেছে নির্বাচনী জনসংযোগ। ছাত্রশিবির, বাম জোট, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সবাই নিয়ম ভঙ্গ করে নেমে পড়েছে নির্বাচনি মাঠে। স্বতন্ত্ররাও পিছিয়ে নেই। কখনো পুরো প্যানেল নিয়ে আবার কখনো ব্যক্তিগত উদ্যোগে তারা ছুটে চলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে।

চায়ের আড্ডায় হঠাৎই প্রার্থী হাজির। করিডরে হেঁটে যেতে শোনা যায় পরিচয়ের ডাক। কেউ সরাসরি চাইছেন ভোট, কেউ ভদ্রভাবে চাইছেন দোয়া, আবার কেউ নিচ্ছেন পরামর্শ।

প্রচারের ধরণেও এসেছে বৈচিত্র্য। কারও হাতে লিফলেট, যেখানে ছাপা আছে নাম আর প্রার্থিত পদ; যেমন শিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা সরাসরি শিক্ষার্থীদের রুমে রুমে গিয়ে আলাপ করছেন, ভিডিও তুলে তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ নামের ফেইসবুক পেইজে। আর ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের সংস্কৃতি সম্পাদক পদপ্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কাফীর কাগজে লেখা ‘দোয়া ও সমর্থন চাই’।

বাম জোটের প্যানেল ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’ তাদের পরিচিতি প্রচার করছে লিফলেটের মাধ্যমে। ইশতেহার তৈরিতে কিউআর কোডের মাধ্যমে চেয়েছেন শিক্ষার্থীদের মতামত ও পরামর্শ। ছাত্র অধিকার পরিষদ মনোনীত প্যানেল ‘রাকসু ফর র‍্যাডিক্যাল চেঞ্জ’ তাদের ভিপি, জিএস ও এজিএসের ছবি সম্বলিত লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে গণ ইশতেহার আহবান করে জনসংযোগ চালাচ্ছে। প্রচার করছেন তাদের নিজস্ব ফেইসবুক পেইজে।

তবে শুধু কথা আর কাগজে সীমাবদ্ধ নেই এই প্রচারণা। আবাসিক হলের ব্লকে ব্লকে খাবারের আয়োজন চলছে, নির্বাচনী ভোজে ডাকা হয়েছে সব ভোটারকে। রুমে রুমে ঘুরে দেওয়া হচ্ছে আতর আর চকলেট, মসজিদে বসছে নতুন বুকশেল্ফ, আবার কোনো হলে স্থাপন করা হচ্ছে পানির ফিল্টার।

এ বিষয়ে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের’ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা বলেন, ‘আমরা গণসংযোগে বেড় হচ্ছি না। আমরা আমাদের নিজেদের সর্কেলের মধ্যে বসছি, পরামর্শ নিচ্ছি। এসময় আমরা যখন চায়ের দোকানে বসছি, তখন শিক্ষার্থীই স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের আকাঙ্ক্ষার কথা জানাচ্ছেন।’

ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী নাফিউল ইসলাম জীবন বলেন, ‘আমরা আসলে প্রচারণার কাজে নামিনি। আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচিত হচ্ছি, কুশল বিনিময় করছি। রাকসুর ভোটার সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। এই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছানোর জন্য যে পরিমাণ সময় দরকার সেই সময়টা নির্বাচন কমিশন দেয়নি। আমাকে যদি শিক্ষার্থীরা না-ই চিনে, তবে তারা আমাকে কেন বেছে নিবে। ফলে আমরা তাদের সাথে পরিচিত হচ্ছি।’

বাম জোটের প্যানেল ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদের’ সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদপ্রার্থী নাসিম সরকার বলেন, ‘আমরা নির্বাচনী প্রচারণা করছি না। আমরা ইশতেহার সংগ্রহ করছি। আমরা লিফলেটে কিউআর কোডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে ইশতেহার চেয়েছি। আমরা যখন ব্যালট নম্বর পাবো, তখন এই ইশতেহার যুক্ত করে ভোটের প্রচারণা চালাবো।’

ছাত্র অধিকার পরিষদ মনোনীত প্যানেল ‘রাকসু ফর র‍্যাডিক্যাল চেঞ্জের’ সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী আল শাহরিয়ার শুভ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন আতর বিলাচ্ছেন। আমরা নির্বাচন কমিশনকে জানালে তারা বলেছেন চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হওয়ার পরে কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তখন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর আমরা প্রচারণা চালাচ্ছি না। ইশতেহার সংগ্রহ করছি।’

এ বিষয়ের রাকসুর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা বিষয়টি শুনেছি। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাইনি। কেউ যদি লিখিত অভিযোগ করে তবে তদন্ত সাপেক্ষে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’