মধুপুরের শালবন উদ্ধারে তিন বছরের পরিকল্পনা, ইউক্যালিপটাস সরিয়ে শাল গাছ রোপণের উদ্যোগ

মধুপুরের ৪৪ হাজার একরের শালবন উদ্ধার এবং সেখানে ইউক্যালিপটাস গাছ সরিয়ে শাল গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান।

তিনি জানান, বর্তমানে ওই শালবনের মাত্র ৩ হাজার একর অবশিষ্ট রয়েছে। আগামী ২২ মে মধুপুরে ১৫০ একর জায়গা থেকে ইউক্যালিপটাস গাছ সরিয়ে শাল গাছ লাগানোর কাজ শুরু হবে। ওইদিন তিনি বন পরিদর্শনে যাবেন বলেও জানান।

সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ‘কৃষি, খাদ্যনিরাপত্তা ও প্রাণ-প্রকৃতি’ সম্মেলনে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, শালবন পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে আগামী এক বছরে যেসব জায়গায় ইউক্যালিপটাস গাছ রয়েছে, সেখানে শাল গাছ রোপণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, “আপনারা হয়ত জুন মাসের মধ্যেই শালবন পুনরুদ্ধারের পুরো পরিকল্পনাটা পেয়ে যাবেন। এই কাজটা এক বছরে বা দেড় বছরে সম্ভব না। আমরা ৩ বছরের একটা টার্গেট করে নামব।”

বন বিভাগের পক্ষ থেকে ১০ বছরের একটি কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়া হলেও উপদেষ্টা জানিয়েছেন, এজন্য এতটা সময় দেওয়া সম্ভব নয়। পরিবেশ সংরক্ষণ ‘যদি কিন্তুর’ আওতায় চলে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি এটিকে মূলধারায় আনার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

মধুপুরের বনে হারিয়ে যাওয়া ময়ূরের প্রজাতি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের কথাও তিনি জানান। তিনি বলেন, “আমরা ৫টি প্রজাতির ময়ূর চিহ্নিত করেছি, যেগুলোকে ক্রমান্বয়ে প্রকৃতিতে ছাড়ব। যেমন ময়ুরকে মধুপুরের বনে ছেড়ে দিয়ে এই কাজটা শুরু করব। আশা করি প্রটোকল ফলো করে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বাংলাদেশের বন থেকে হারিয়ে যাওয়া কিন্তু জু বা সাফারিতে থাকা ৫টি প্রজাতি আমি আবার ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হব।”

সম্মেলনে তিনি জানান, কৃষি জমি সুরক্ষা আইন আগামী তিন মাসের মধ্যে অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষ হবে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার পর আরেকটি সভায় সবার মতামত নিয়ে এটি চূড়ান্ত করা হবে।

শুধু খাদ্যের পরিমাণ নয়, মানের দিকেও গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ধরেন একটা শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রচুর দূষণ করছে, সেখানে এক হাজার শ্রমিক কাজ করছে। ওই শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বারবার নোটিস দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা করা হচ্ছে, আদালতের নির্দেশ আছে। তাকে যখন আমরা বন্ধ করতে যাব তখন কিন্তু একটা প্রচন্ড বিতর্ক সামনে নিয়ে আসা হবে, এক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়ছে। আবারও আমি সেই বাট ও ইফের গিয়ে পড়লাম।”

তিনি পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের ‘না’ বলতে পারার অধিকার চেয়েছেন। বলেন, “এই উন্নয়নকে আমরা হ্যাঁ বলতে পারছি না, এই প্রকল্পকে আমরা হ্যাঁ বলতে পারছি না। এই না শুনবার মানসিকতাও কিন্তু আমাদের সকলের মধ্যে আসতে হবে। ১০০টা শর্ত দিয়ে অনুমোদন দিয়ে দিলাম, এটা কিন্তু সমস্যার সমাধান করছে না।”

সম্মেলনের প্যানেল আলোচনায় অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষককে ঘিরে পরিকল্পনায় দেশের পরিস্থিতি, প্রাণ প্রকৃতি ও সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, “আমাদের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। কিন্তু সেটার জন্য কী কী মূল্য দিতে হয়েছে- মাটি, পানি, মানুষ সেগুলির একটা হিসাব আমাদের করা দরকার।”

তিনি বলেন, কৃষিকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যের ব্যাপক সম্প্রসারণ হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এটি কৃষকের জন্য নাজুক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

অধিকারকর্মী খুশি কবীর বলেন, কৃষির সঙ্গে ভূমির সম্পর্ক গভীর। ভূমি বন্দোবস্ত, ব্যবহার ও নিবন্ধন নীতিমালায় এখনও বহু ত্রুটি রয়েছে।

তিনি বলেন, “চেষ্টা করা হচ্ছে ডিজিটাইজ করার জন্য, সেখানেও সমস্যা হচ্ছে। আমরা সবাই জানি অধিকাংশ মামলা যেগুলো কোর্টে আছে, তার দেখা গেছে যে ৭০ ভাগ ভূমির সঙ্গে সম্পর্কিত। আর এই ভূমির উপরেই কৃষিটা সবচেয়ে নির্ভরশীল।”

এর আগের অধিবেশনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, কীটনাশকের ব্যবহার হাওরের মাছকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

তিনি বলেন, “এছাড়া কোনো উপায় নাই। খাদ্য সংখ্যাগতভাবে, পরিমাণগতভাবে হলে হবে না। আমাকে আসলে নিরাপদ খাদ্যটাই উৎপাদন করতে হবে। মুনাফাকে প্রাধান্য না দিয়ে দেশের মানুষকে খাদ্যের যোগানের প্রাধান্য আপনাদেরকে দিতে হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *