সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে চট্টগ্রামে আরও চারটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।
চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ মঙ্গলবার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। আদালতের সহকারী পিপি মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী জানান, গত বছরের ২৬ নভেম্বরের ঘটনায় পুলিশের করা তিনটি মামলায় এবং আইনজীবী আলিফের ভাইয়ের করা একটি মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তারা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেন।
আসামির নিরাপত্তা ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চিন্ময়কে জেলখানা থেকে ভার্চুয়ালি শুনানিতে যুক্ত করা হয়।
এর আগে সোমবার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন আদালত।
গত বছরের ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। এরপর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন। আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাসকে কারাগারে পাঠায়।
বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করে। এরপর আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন।
ওই সহিংসতার ঘটনায় রাতেই পুলিশ তিনটি মামলা করে। আদালত প্রাঙ্গণ, রঙ্গম সিনেমা হল ও কোতোয়ালি মোড়ে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে এসব মামলা হয়। আদালত প্রাঙ্গণে হামলার ঘটনায় ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৬০০/৭০০ জনকে, রঙ্গম সিনেমা হলের ঘটনায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০০/৪০০ জনকে এবং কোতোয়ালি মোড়ের ঘটনায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২৫০/৩০০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, চিন্ময়কে ছিনিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আদালত প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মারধর, জখম, ভাঙচুর, লুটপাট, ক্ষতিসাধন, ককটেল বিস্ফোরণ, সরকারি কর্তব্য কাজে বাধা এবং অপরাধমূলক বলপ্রয়োগের ঘটনা ঘটানো হয়।
আইনজীবী আলিফকে হত্যার ঘটনায় ২৯ নভেম্বর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন তার বাবা জামাল উদ্দিন। মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১৫/১৬ জনকে আসামি করা হয়। একই দিন আইনজীবীদের ওপর হামলা, বিস্ফোরণ ও ভাঙচুরের অভিযোগে আলিফের ভাই খানে আলম আরও একটি মামলা করেন, যেখানে ১১৬ জনকে আসামি করা হয়।
জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। গত বুধবার ওই মামলায় হাইকোর্ট তাকে জামিন দিলেও রাষ্ট্রপক্ষ জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে। পরে আরও পাঁচ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোয় আপাতত তার মুক্তির সম্ভাবনা আর থাকছে না।