ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে একজন রিকশাচালককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তাঁর চাচাতো ভাই ও স্বজনদের বিরুদ্ধে। ঘটনার সময় রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে নিহত খোকন মিয়া (৪০) মারধরের শিকার হন। তিনি উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের করমা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, করমা গ্রামের কছিম উদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিন দুই ভাই ছিলেন। ৬–৭ বছর আগে গিয়াস উদ্দিনের মৃত্যুর পর জমি সংক্রান্ত বিরোধ শুরু হয় কছিম উদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিনের সন্তানদের মধ্যে। এর জের ধরে দুই পরিবারের মধ্যে থানা পর্যন্ত পৌঁছানো তিনটি মারামারির মামলা দায়ের হয়। স্থানীয়ভাবে কয়েক দফা মীমাংসার চেষ্টা করা হলেও তা কার্যকর হয়নি।
স্থানীয় সূত্রের ভাষ্য, গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে খোকন মিয়া রিকশা রেখে ঘর থেকে বের হন। তখন গিয়াস উদ্দিনের ছেলে, মগটুলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি নজরুল ইসলাম ও তাঁর ভাই এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা খোকনকে ধরে পিটিয়ে তাঁর দুই হাত ও দুই পা ভেঙে দেন। শরীরের বিভিন্ন স্থানে এবং মাথায় আঘাত করার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে রাত একটার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক খোকনকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত খোকন মিয়ার ছেলে বিল্লাল হোসেন বলেন, “জমি নিয়ে পূর্ববিরোধের জেরে আমার বাবাকে হত্যা করেছে নজরুল ও তার ভাইরা। যারা হত্যাকারী, তাদের বিচার চাই।” তিনি বর্তমানে গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান জানান, “রাত দেড়টার দিকে যখন খোকন মিয়াকে উদ্ধার করি, তখনও তিনি জীবিত ছিলেন, কথা বলেছেন এবং পানি খেয়েছেন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তার দুই হাত ও দুই পা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, মাথাতেও আঘাত ছিল।” তিনি আরও জানান, হত্যার সঙ্গে ছাত্রদল নেতা নজরুল, তাঁর ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীরা জড়িত। ইতিমধ্যে জ্যোৎস্না আক্তার ও সোহাগ নামে দুজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।
ঘটনার পর থেকে নজরুল ইসলাম ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা পলাতক রয়েছেন। এ কারণে তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ফরহাদ আহমেদ বলেন, “জমি সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা আমরা করেছি, কিন্তু কেউ মানেনি। হত্যার ঘটনাটি ন্যক্কারজনক। অপরাধীর কোনো দলীয় পরিচয় থাকলেও সে পদ রাখার যোগ্য নয়। তাকে বহিষ্কার করা এখন সময়ের বিষয়। আমরা বিষয়টি জেলাকে অবহিত করছি।”
