কুয়েটে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষকদের অনড় কর্মবিরতি, অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরা

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ৭৪ দিন পর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও ক্লাসে ফিরেননি শিক্ষকরা। একাডেমিক কার্যক্রম চালু হওয়ার তৃতীয় দিনেও শিক্ষকরা কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন।

শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের শাস্তির দাবি করে শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী সেশনজটে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।

অচল অবস্থায় রয়েছে প্রশাসনিক ও উন্নয়ন কার্যক্রমও। উপাচার্য হযরত আলী শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করলেও কোনো সমাধান আসেনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আনিসুর রহমান ভুঞা এবং ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার জানান, সংকট নিরসনে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে ক্যাম্পাসে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষগুলো ফাঁকা। অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিজ নিজ হলে অবস্থান করছেন। বাইরে থাকা শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফেরেননি। প্রধান গেইটে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

সোমবার শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত হয়, শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় দোষীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করবেন শিক্ষকরা। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন জানান, সাত দিনের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে প্রশাসনিক কাজ থেকেও বিরত থাকবেন তারা।

অন্যদিকে, শিক্ষার্থীরা দুই দফা ক্ষমা চেয়ে জানিয়েছেন, তারা বিদ্বেষমূলক আচরণে যেতে চান না এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তারা চান, শিক্ষার্থীদের বিচার হোক, তবে একাডেমিক কার্যক্রমও চলুক।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয় ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে, যাতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা দেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং ৪০০-৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করা হয়।

১৩ এপ্রিল থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি, ২১ এপ্রিল থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

১৮ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার কুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে অনশন ভাঙাতে ব্যর্থ হন। পরদিন সিন্ডিকেট ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে ও হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

ইউজিসি প্রতিনিধি দল ২১ এপ্রিল রাতে ক্যাম্পাসে গিয়ে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের অপসারণের বার্তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান।

তবে শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে কবে নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে তা এখনও অনিশ্চিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *