আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে যমুনার সামনে এনসিপির অবস্থান, রাতেই ফয়সালার হুমকি

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর ডাকে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার সামনের সড়কে অবস্থান নিয়েছেন হাজারো বিক্ষোভকারী।

বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর থেকে যমুনামুখী সব সড়ক বন্ধ করে রেখেছে পুলিশ। কাকরাইল মোড়, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং ও মিন্টু রোড মোড় থেকে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। তবে ছোট ছোট মিছিলগুলোকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। কাউকেই রিকশা, মোটরসাইকেল বা গাড়ি ব্যারিকেডের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

রাত ১০টায় যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। রাত ১টার দিকে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি মিছিল অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেয়।

রাত আড়াইটার দিকে যমুনার সামনে স্লোগান দিতে দেখা যায় হাজারো মানুষকে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত আরিফুর রহমান তুহিন বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত অবস্থান চলবে।

যমুনার সামনে এক সারি পুলিশ ব্যারিকেডে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ব্যারিকেডের ভেতরে আর্মড পুলিশ, তার পেছনে ডিবি এবং আরও পেছনে সেনাবাহিনী দাঙ্গা দমনের সরঞ্জামসহ অবস্থান নিয়েছে। তাদের হাতে রয়েছে ঢাল ও লাঠি। উপস্থিত জনতার নেতৃত্বে স্লোগান ধরেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনার পর এ কর্মসূচির ডাক দেন হাসনাত। রাত পৌনে ১০টার দিকে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টে তিনি জানান, রাত ১০টা থেকে যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলবে। পোস্টে তিনি লেখেন, “গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না পাওয়া পর্যন্ত আজ রাত ১০টা থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলবে। যার এজেন্ডায় গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট বয়ান নাই, তার সাথে আমরা নাই।”

এই পোস্টে ১০ মিনিটে আড়াই হাজার মন্তব্য এবং এক হাজারের বেশি শেয়ার হয়। অধিকাংশ মন্তব্য সমর্থনমূলক হলেও কিছু বিরোধী মন্তব্যও দেখা যায়। কেউ লিখেছেন “সেরা ডিসিশন ক্যাপ্টেন”, “সহমত ভাই”, “ইনকিলাব জিন্দাবাদ”—আবার কেউ মন্তব্য করেছেন, “নাটক কইরেন না আপনারা, জনগণ অতিষ্ঠ”, “হাসনাত হঠাও দেশ বাঁচাও”, “বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগ সরকার চায়।”

বুধবার রাতে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের পর থেকেই সোচ্চার হয়ে ওঠে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম। জুলাইয়ের ঘটনায় কিশোরগঞ্জ সদর থানার একটি মামলায় শেখ হাসিনা ও আবদুল হামিদের নাম রয়েছে। হামিদ দেশ ছাড়ার পর ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আজহারুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত এবং কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীকে প্রত্যাহার করা হয়।

একইসাথে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগের ঘটনায় দায়িত্বরত পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহসিনা আরিফকে প্রত্যাহার ও এটিএসআই মো. সোলায়মানকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

রাতে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম নিজের ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সবাইকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান। তিনি লেখেন, “সবাই চলে আসুন। জুলাইয়ের সকল শক্তি, শহীদ পরিবার ও আহতদের আহ্বান জানাই রাজপথে নামার জন্য। বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে।”

নাহিদ আরও লেখেন, “আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। আসামীদের জামিন দেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রপতিকে চোখের সামনে পালাতে দেওয়া হয়েছে। আজ রাতেই ফয়সালা হবে আওয়ামী লীগের বিষয়ে। আওয়ামী লীগের বিচার, নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না আসা পর্যন্ত আমরা রাজপথ থেকে উঠবো না।”

 

One thought on “আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে যমুনার সামনে এনসিপির অবস্থান, রাতেই ফয়সালার হুমকি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *